Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Mamata Banerjee at Alipurduar

চা সুন্দরীর বদলে টাকার প্রস্তাব, ভাতা শ্রমিকদের

রবিবার আলিপুরদুয়ার সদরের প্যারেড গ্রাউন্ডের সভা থেকে তিনি জানান, শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার পাশাপাশি সে জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য অর্থ দেবে রাজ্য সরকার।

Mamata banerjee

সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে। ছবি:সন্দীপ পাল।

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৯
Share: Save:

চা বাগানের জেলায় ‘ফসল’ ফলাতে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবিবার আলিপুরদুয়ার সদরের প্যারেড গ্রাউন্ডের সভা থেকে তিনি জানান, শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার পাশাপাশি সে জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য অর্থ দেবে রাজ্য সরকার। প্রতিটি বাড়ি বানাতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য। সেই সঙ্গে বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা যাতে চলতি মাস থেকেই দেড় হাজার টাকা করে পান, সে ব্যাপারে প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশও দিলেন। আদিবাসী জনজাতিদের শংসাপত্র পাওয়া সহজ করতে এবং তা জাল হওয়া রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন তিনি। তবে চা শ্রমিক সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “চা সুন্দরী আমরা করেছি। ভাবছি, চা সুন্দরী না দিয়ে, যে জমিতে আমরা পাট্টা দিচ্ছি, সেখানে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকাও পাট্টার সঙ্গে আমরা দিয়ে দেব। তা হলে আপনারা ঘর বানিয়ে নেবেন। এটা আগামী দিনে আমরা করব।” মাদারিহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের চা সুন্দরী প্রকল্প ধুলোর সঙ্গে মিশে গিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে চা শ্রমিকদের ঘর বানিয়ে নাম কামানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।” যদিও আবাস যোজনায় কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে টাকা বন্ধ রেখেছে এবং সেই অর্থ আদায়ে আন্দোলন চলছে, জানিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “সরকারি নিয়মেই বাড়ি বানানোর জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। রাজ্য এই নিয়ম মানছে। এই বাড়ি রাজ্য সরকারই গড়বে। মনোজ টিগ্গাদের বা বিজেপি সরকারের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নেওয়া হবে না।”

বোনাস নিয়ে সমস্যার জেরে, পুজোর সময় আলিপুরদুয়ার-সহ ডুয়ার্সের বহু চা বাগান বন্ধ হয়েছে। এ দিনের সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী শ্রম দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, “যে সব চা বাগান বন্ধ পড়ে রয়েছে, সেখানে ওঁদের দেড় হাজার টাকা করে মাসে দিন। ওঁদের বিদ্যুৎও বিনামূল্যে দিন। পানীয় জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবাও দিন। শ্রম দফতরকে আমি নির্দেশ দিচ্ছি, এই মাস থেকে দেড় হাজার টাকা দেওয়া শুরু হোক।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রম দফতরের আলিপুরদুয়ারের এক আধিকারিক জানান, বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা প্রত্যেকেই মাস পিছু দেড় হাজার টাকা করে করে ‘ফাউলাই’ (সরকারি অর্থনেতিক সাহায্য) পান। তিনি আরও বলেন, “চা বাগান বন্ধ হওয়ার এক বছরের মধ্যে অবশ্য শ্রমিকদের ফাউলাই দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে, সে সংক্রান্ত নতুন নির্দেশ রাজ্য থেকে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।” পুজোর সময় থেকে বন্ধ হওয়া জেলার পাঁচটি বাগানের শ্রমিকেরা যাতে অবিলম্বে এই প্রকল্পের অধীনে চলে আসেন, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত তা-ই বলতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন তিনি।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নদিয়ায় বলেন, ‘‘দেড় হাজার টাকা ভাতায় কি তাঁদের (শ্রমিকদের) সংসার চলবে? আসলে, বন্ধ চা বাগান খোলা হবে না। তাই শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে যাতে বাগানের কর্মীরা বিক্ষোভ না-দেখান, ঘেরাও না করেন, তার জন্য ঘুষ দেওয়া হচ্ছে।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ পাল্টা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা চা বাগান খোলার নামে ভাঁওতা দিচ্ছেন। সেখানে নানা আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিক মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চা শ্রমিকদের
পাশে দাঁড়াচ্ছেন।”

চা শ্রমিকদের ভাতা, চা সুন্দরীর বদলে টাকার প্রস্তাব দিয়ে এ দিনের সভা থেকে আদিবাসী সমাজের বাসিন্দাদের নিজের ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জনজাতিদের নাম করে অনেক জাল শংসাপত্র হয়েছে। রিভিউ করে সেগুলি বাতিল করা হবে।” পরিবারের যে কোনও এক জনের কাগজ নিয়ে চলতি মাসে হওয়া দুয়ারে সরকারের শিবিরে শংসাপত্রের জন্য আবেদন করতেও আদিবাসী সমাজের বাসিন্দাদের পরামর্শ দেন তিনি। নির্দেশ দেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যেন সেই শংসাপত্র বিলি হয়। একই সঙ্গে জাল শংসাপত্র নিয়ে অভিযোগ জানাতে দুয়ারে সরকারের বিশেষ শিবির করারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE