—ফাইল চিত্র।
‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্পের টাকায় তৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রং কেন গেরুয়া করা হচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে ‘রাজ্যের প্রাপ্য’ আটকে রাখা হচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বকেয়া অর্থ মেটানোর আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লিখেছেন তিনি। সেই বিতর্কের আবহে সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী কারণ ব্যাখ্যা করলেন, কেন গেরুয়া রঙের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নীল-সাদা রং করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে গেরুয়া রং করতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি ওই রং করবেন না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রং নীল-সাদাই থাকবে।
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, ২০১১ সালের পর থেকে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির রং নীল-সাদা করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মিশনে তা গেরুয়া করতে হবে। এই রঙের বৈষম্যের জন্য এই খাতে ‘রাজ্যের প্রাপ্য’ থেকে কেন্দ্র তাদের বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি আন্তরিক ভাবে অনুরোধ করছি যাতে আপনি বিষয়টায় হস্তক্ষেপ করেন এবং বিশেষ একটি রং ব্যবহার নিয়ে আপত্তি মিটিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা পাঠানো হয়।’’ বাংলার গরিব মানুষ যাতে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করার আর্জিও জানিয়েছিলেন মমতা।
স্বাস্থ্য প্রকল্পে কেন্দ্র থেকে টাকা আসা বন্ধ হওয়া নিয়ে সোমবার বিধানসভাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রের পছন্দ মতো রং করা হয়নি বলে টাকা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণেই এই ‘বঞ্চনা’ বলেই অভিযোগ করেন মমতা। যদিও বিরোধীদের অনেক দিনের অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-সরকারি প্রতিষ্ঠানে যে নীল-সাদা রং করা হচ্ছে, সেটিও মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের রং। মুখ্যমন্ত্রী চান বলেই তো ওই রং করা হয়। তার পিছনেও ‘রাজনীতি’ই রয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। স্বাস্থ্যেকেন্দ্রের রং নিয়ে বিতর্কে তার জবাব দিলেন মমতা। তিনি জানান, নীল-সাদা কোনও রাজনৈতিক রং নয়। সেটি আকাশের রং। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘আকাশের কোনও লিমিট (সীমা-পরিসীমা) থাকে না। তাই ওই রং।’’ এর পরেই বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের সময় রং নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে। কিন্তু সব সময় নয়। আমি ওই রং (গেরুয়া) করতে দেব না।’’
রং নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ বেশ কিছু দিন ধরেই তুলেছে তৃণমূল। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রাস্তাঘাটের রেলিং থেকে শুরু করে সরকারি ভবন, সবই নীল-সাদা রং করায় তৃণমূল সরকার। রাজ্যের মুখ্য সচিবালয়ের রংও নীল-সাদা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থে বাংলায় সম্প্রতি তৈরি হয়েছে ৪৭৪টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ৬৫টি ব্লক ও ২৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এগুলির রংও নীল-সাদা। এখানেই আপত্তি কেন্দ্রের। ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের দাবি, প্রকল্পের ‘ব্র্যান্ডিং’ মানেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ‘ব্র্যান্ডিং’-এর মধ্যে প্রকল্পের নাম যেমন থাকে, তেমনই এই প্রকল্পে তৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাড়ির রংও রয়েছে। সেটা গেরুয়া। এই প্রকল্পের ৬০ শতাংশ টাকাই দেয় কেন্দ্র। বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্যের। এখন রাজ্য শর্ত মানেনি, এই অভিযোগে কেন্দ্রের অর্থের অংশ ৮২৬.৭২ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে না বলেই খবর নবান্ন সূত্রে।
এ নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার গত বৈঠকেই সরব হন মমতা। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘সব কিছু ওরা গেরুয়া করে দিচ্ছে। স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে রেলস্টেশন, সরকারি বাড়ি— সব কিছু গেরুয়া করে দিচ্ছে। সব কিছুরই রাজনীতিকরণ হয়ে যাচ্ছে।’’ পরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের অধিবেশনেও মমতা বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যের প্রকল্পগুলোয় গেরুয়া রং না করলে টাকা দেবে না বলছে। কী সাহস!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy