কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
আগেই আদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় বুধবার যে-হলফনামা জমা পড়ল, তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারলেন না কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম। তাঁর এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, হলফনামা অপ্রয়োজনীয় কথায় ভর্তি। তাই নির্দিষ্ট ভাবে কী কী নির্দেশ পালন করা হয়েছে এবং কী কী হয়নি, তা আগামী সোমবারের মধ্যে ফের জানাতে বলেছে আদালত। সে দিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এ দিন হলফনামায় সই করতে আদালতে সশরীরে হাজির হন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিন্হা। তবে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, আদালতে এসে শুধু হলফনামা দিলে হবে না। মানুষের আস্থা অর্জন করা যাবে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এমন কাজ করা জরুরি।
আদালত পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ যে-নির্দেশগুলি দিয়েছিল, তা সময়ে পালন করা হয়নি বলে কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল। এ দিন মামলার শুনানিতে কমিশনের কৌঁসুলি কিশোর দত্ত কমিশনারের রিপোর্ট কোর্টে পেশ করেন এবং তার ব্যাখ্যা দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কিছু (কাজ) দেখান যাতে মানুষ নিশ্চিন্ত হতে পারেন। আপনারা আইনি অধিকার বলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালত তো বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছে।’’ এ দিন প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘কমিশন কী ভাবে নির্দেশ পালন করবে তার খুঁটিনাটি পরামর্শ দেওয়ার জন্য কোর্ট বসে নেই।’’
রাজ্য এবং কমিশনের যৌথ ভূমিকা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি। কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, অতীতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কমিশন। এখন কমিশন এবং রাজ্য হাত মিলিয়ে চলছে। তবে রাজ্য প্রশাসন সক্রিয় না-হলে কমিশন যে সফল হবে না, সে কথাও বলেছেন তিনি। কোর্টে উপস্থিত রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা বরং কমিশনকে সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ১৮ নম্বর সরোজিনী নায়ডু সরণিতে (কমিশনের অফিস) গিয়ে বৈঠক করুন বা ভিডিয়ো বৈঠক করে বিষয়গুলির সমাধান করুন। এ ব্যাপারে কোনও সমঝোতা করা যাবে না।’’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের টানাপড়েন অব্যাহত। এই আবহে এ দিন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী কোর্টে জানান, বাহিনীর জওয়ানদের জন্য ন্যূনতম কী পরিকাঠামো রাজ্যে রয়েছে, তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বারবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য কোনও উত্তর দেয়নি। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্ট যে-নির্দেশ দিয়েছে তা রাজ্য এবং কমিশনের অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলা উচিত। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নিয়ে কী কাজ এগিয়েছে, তা-ও কমিশনের কাছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি।
কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী সৌম্য মজুমদার এবং শ্রীজীব চক্রবর্তী। তাঁরা জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের হলফনামায় বলা হচ্ছে যে, ৯ জুন মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হয়েছিল কিন্তু এখনও স্পর্শকাতর জেলা চিহ্নিত করা হয়নি। এর পাশাপাশি এ দিন কমিশনের বিরুদ্ধে সিভিক ভলান্টিয়ার এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ভোটে ব্যবহার করা নিয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষার অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিযুক্ত করা নিয়ে লালবাজারের একটি নির্দেশের কথাও আদালতে জানানো হয়। এর পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ভোটে প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগও কোর্টে জমা পড়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কমিশন অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনে সংশোধন করবে। একটি সূত্রের দাবি, কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরেই লালবাজার ওই নির্দেশ শুধরে নিয়েছে। ভোটকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কোর্টে। কমিশনকে ভোটকর্মীদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy