শাসকদলের বেঞ্চ প্রায় ফাঁকা। বসে রয়েছেন গুটিকয়েক বিধায়ক। আর মন্ত্রীদের মধ্যে কেবল চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। আর কোনও মন্ত্রী নেই! সোমবার বিধানসভায় দ্বিতীয়ার্ধে অধিবেশন কক্ষে ঢুকে এই দৃশ্য দেখে রেগে গেলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বলে উঠলেন, ‘‘মন্ত্রীরা কেউ নেই কেন? পরিষদীয়মন্ত্রী কোথায় গেলেন? হাউস চলবে কী করে?’’ যদিও সেই সময়েই সকলে একে একে ঢুকতে শুরু করেন কক্ষে। সেখানে তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষও ছিলেন। তাঁকেও রেগে গিয়ে বিমান প্রশ্ন করেন, ‘‘মন্ত্রীরা কোথায়?’’
অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেও উত্তাল হল বিধানসভা। বারণ করা সত্ত্বেও কথা বলতে থাকায় দুই বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এবং মনোজ ওঁরাও-কে মার্শাল ডেকে বারও করে দিলেন স্পিকার। তারই প্রতিবাদে সোমবার অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করলেন পদ্ম বিধায়কেরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আজ যা ঘটল, তা নিয়ে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরেই যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখন বিধানসভায় যে সব মার্শাল কর্মরত, তাঁরা সকলেই এক্সটেনশনে রয়েছেন। এত দিন বাইরে যে দাদাগিরি দেখাতেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, এখন সেটা বিধানসভার ভিতরে দেখাচ্ছেন। গুন্ডামি চলছে বিধানসভায়।’’ বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্করও বলেন, ‘‘বিধানসভায় বিরোধীদের তো কথা বলতেই দেওয়া হয় না।’’
সোমবার দ্বিতীয়ার্ধের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর রাজ্য সরকারের বিজ্ঞাপন নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ে স্পিকার তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি এ ভাবে কথা বলতে পারেন না।’’ পাল্টা হিরণ বলেন, ‘‘আমি কী বলব, তা আপনিও ঠিক করে দিতে পারেন না। জনপরিষেবা কমিশনে রাজনৈতিক প্রভাবিত লোকেদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছে না।’’ ফের তাঁকে বলতে বারণ করেন স্পিকার। পাল্টা হিরণও বলেন, ‘‘আপনি এ ভাবে আমাকে ডিকটেট (নির্দেশ দিতে) করতে পারবেন না।’’
এর পরেই হিরণের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। স্লোগান তোলেন তাঁরা। সেই সময়েই শঙ্কর এবং মনোজকে কক্ষ থেকে বার করে দেওয়ার নির্দেশ দেন স্পিকার। দুই সতীর্থকে অধিবেশন কক্ষ থেকে বার করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিধানসভার কার্যবিবরণী ছিঁড়ে ফেলেন ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মণ। স্পিকার তাঁকে সাসপেন্ড করেন। প্রসঙ্গত, চলতি অধিবেশনে সাসপেন্ড হয়েছেন শুভেন্দু। তবে দীপককে গোটা অধিবেশনের জন্য নয়, শুধু সোমবারের জন্যই সাসপেন্ড করা হয়েছে।