কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবীদের বিক্ষোভ। ছবি: সৌজন্য টুইটার।
আইনজীবীদের একাংশের বিক্ষোভে বুধবার উত্তাল হয়ে উঠল কলকাতা হাই কোর্ট চত্বর। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করতে চেয়ে ১৭ নম্বর কোর্টের সমানে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের আইনজীবী সেলের সদস্যদের একাংশ। ঘেরাও করে রাখেন বিচারপতির কোর্টও। এমনকি ওই কোর্টের ভিতরে কোনও আইনজীবীকে ঢুকতে না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
রাজ্যের কয়েকটি ঘটনায় পর পর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে কেন সরব হয়েছেন তিনি, সেই অভিযোগে এজলাস বয়কটের ডাক দেন ওই আইনজীবীরা। বিচারপতির কোর্টের বাইরে চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আইনজীবীদের শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করেন। তাঁদের সমস্যা কোথায়, কেন তাঁরা কোর্টের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তা জানতে চান তিনি। বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “আমি আর ৫-৭ মিনিট সময় দেব। আপনাদের যা দাবি আছে বলুন। আমি তা শুনানির অংশ হিসাবে নেব না। এবং তা রেকর্ডেও থাকবে না। তবে অনুরোধ করছি শান্তি বজায় রাখুন।”
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলের এক আইনজীবীকে বলেন, “ক'দিন আগে বার কাউন্সিলের সভাপতি অশোক দেবের সঙ্গে আমার কথা হল। আপনাদের বলছি, রাজনীতি করবেন না। আমি তো কোনও রাজনীতি করছি না। শুধু একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হতে চেয়েছি।” তৃণমূলের আইনজীবী সেলের চণ্ডীচরণ দে পাল্টা বলেন, “আপনার সিবিআই নির্দেশ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তা নিয়ে কিছু বলিওনি। শুধু ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে কেন সেটাই বলেছি।”
এর পরই বিচারপতি বলেন, “আপনাদের যদি মনে আমি ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি তা হলে সুপ্রিম কোর্টে যান। এ ভাবে বিক্ষোভ কেন। যে ভাবে চিঠি দিয়েছেন তা বেদনাদায়ক।”
অন্য দিকে, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও এই বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মামলার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত নন, তাঁদের চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। বিকাশরঞ্জন বলেন, “শুধু মাত্র এই কোর্টের সামনে আপনারা ভিড় করে আছেন কেন? এ ভাবে চিৎকার করলে কি শুনানি করা সম্ভব? এ ভাবে চললে শুনানি হবেই না। আমি চলে যাচ্ছি।” এর পরই তিনি কোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান।
আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ও এই ঘটনায় আপত্তি জানান। তিনি বলেন, “এটা তো গুন্ডামি হচ্ছে!” অন্য দিকে, আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, এই কোর্ট বয়কট করতে চেয়ে প্রস্তাব পাশ করাতে চেয়েছিলেন বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা। কিন্তু তাঁরা তা করতে পারেননি।
আদালতের ভিতরে পর পর এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে তুলে ধরে তাঁদের নিরাপত্তার আর্জি জানান। আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতিকে বলেন, “আদালতের মধ্যেই হামলা চালানো হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?” এর পরই চলতি সমস্যা সমাধানের জন্য হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি, রেজিস্ট্রার এবং আইনজীবীদের মধ্যে বৈঠক হয়। কিন্তু সেই বৈঠক থেকে কোনও রফাসূত্র পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, আইনজীবীদের একাংশ এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন।
মঙ্গলবারই হাসখাঁলি ধর্ষণ নিয়ে মামলা চলাকালীন আইনজীবীদের দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা নিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বার অ্যাসোসিয়েশনের শাসক এবং বিরোধীর আইনজীবীরা। এই গন্ডগোলের মধ্যে এক আইনজীবী অন্য এক আইনজীবীর হাতে কামড়ে দেন বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে ছুটতে হয় আইনজীবী কল্লোল বসুকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy