বন্ধ: বাগদার মামাভাগিনা গ্রামে তালাবন্ধ চন্দনের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
চন্দনের সুবাস কোথায় কত দূর ছড়িয়েছিল, এ বার তা নিয়ে শুরু হল চাপানউতোর।
বাগদার বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুক্রবার বনগাঁ শহরে দলীয় কর্মসূচিতে এসে বলেন, ‘‘শোনা যাচ্ছে চন্দন ১৭০০ লোককে চাকরি দিয়েছেন। ১৫-৩০ লক্ষ টাকায়। অর্থাৎ, গড়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। সেই টাকা বস্তা ভরে কলকাতায় নেতা-মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে।’’
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দুলাল বর অধুনা বিজেপিতে। তাঁর আবার দাবি, ৫০ হাজার টাকা নগদ দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন চন্দন মণ্ডল।
চন্দনের নাম বদলে ‘রঞ্জন সৎ’ ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন বাগদা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। এক সময়ে সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা ছিলেন উপেন। বছরখানেক আগে এক ভিডিয়োয় তিনি দাবি করেন, বাগদার বাসিন্দা জনৈক রঞ্জন (পরে হাই কোর্টে মামলা চলাকালীন জানা যায় তাঁর নাম চন্দন মণ্ডল) বহু লোককে স্কুলে চাকরির বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন। সম্প্রতি প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতির মামলায় চন্দনকে জেরা করতে পারে সিআইবি, জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
চন্দন এলাকায় দাবি করতেন, ‘অনেক উঁচু’ পর্যন্ত তাঁর হাত প্রসারিত। বাড়ির সামনে গভীর রাতে ‘ভিআইপি’ লেখা গাড়ি যাতায়াত করতে দেখেছেন বলে জানাচ্ছেন পাড়া-পড়শিরা। সেই চন্দন টাকা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে দাবি করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা দুলাল।
দুলালের কথায়, ‘‘কয়েক বছর আগে উনি (চন্দন) নিজে আমাকে বলেছিলেন, ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তৃণমূলের সদস্য হয়েছেন। তবে এলাকায় তাঁকে সক্রিয় রাজনীতি করতে দেখা যায়নি।’’
দুলালের এই কথা বিঁধেছে শাসক শিবিরের গায়ে। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠের দাবি, ‘‘চন্দন তৃণমূল পরিবারের কেউ নন। আমাদের দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিলেন না। যিনি অভিযোগ করছেন (দুলাল), তাঁর পরিবারের কেউ চন্দনের কাছ থেকে চাকরি নিয়েছেন কি না, তা সিবিআই খতিয়ে দেখুক।’’
দুলালের দাবি, ‘‘তৃণমূলে চন্দনের যোগাযোগ অনেক দূর। গত বিধানসভা ভোটে বাগদায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন পরিতোষ সাহা। তাঁর প্রার্থী হওয়ার পিছনে চন্দনের ভূমিকা ছিল। পরিতোষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।’’
পরিতোষের আবার বক্তব্য, ‘‘দুলাল বিজেপি করেন। তিনি কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না। তাঁর অভিযোগ থাকতে পারে। তবে আমাকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি বাগদার বাসিন্দা, চন্দনও বাগদার বাসিন্দা। পরিচয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।’’
উপেন ভিডিয়োয় দাবি করেছিলেন, ‘রঞ্জন’ কারও থেকে টাকা নিয়ে তাঁকে চাকরি দেননি, এমন সচরাচর ঘটেনি। টাকা নিয়ে চাকরি দিতে না পারলে টাকা নাকি তিনি ফিরিয়েও দিতেন। যে কারণে, এলাকার লোকজন রঞ্জনকে সৎ বলেই চিনত।
দুলাল অবশ্য সে কথা মানছেন না। তাঁর দাবি, চন্দন কাউকে টাকা ফেরত দেননি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে বলতেন, পরের প্যানেলে নাম তুলে দেবেন।
তবে চন্দন যে টাকা নিয়ে অনেকে চাকরি দিয়েছেন, সে তথ্য অজানা নয় অনেকের। স্থানীয় বাসিন্দা তথা একটি সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান হারানচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার ছেলের গ্রুপ-ডি চাকরির জন্য চন্দনকে বলেছিলাম। ৪-৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। আমি দিতে পারিনি। পরে চন্দন আমাকে বলে, দাদু এখন হবে না। ওই কাজ আর করছি না। তবে ও অনেককে চাকরি দিয়েছেন, এ কথা ঠিক। "
শুক্রবার চন্দনের বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, স্কুলে চাকরির জন্য চন্দনকে ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সেটা ফেরত পাবেন কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত।
চন্দন বাড়ি নেই বেশ কিছুদিন ধরে। বুধবার পর্যন্ত এক মেয়ে ও স্ত্রীকে বাড়িতে দেখা গিয়েছে। তবে তাঁরাও এখন নেই। তালা ঝুলছে মামাভাগিনা গ্রামে দোতলা গোলাপি রঙের বাড়ির দরজায়। পড়শিরা জানালেন, দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত। সেখানেও পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন চন্দন।
প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় উপেন বিশ্বাসকে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, তিনি যেন মামলায় তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করেন। শুক্রবার সকালে উপেন জানান, আদালতের নির্দেশের কপি তিনি পেয়েছেন। ‘সম্পূর্ণ সহযোগিতার’ আশ্বাসও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আদালত আমাকে চাকরি বিক্রির এই দুর্নীতি (স্ক্যাম) উন্মুক্ত করতে সহযোগী করতে বলছেন। এটা খুবই বড় বিষয়। আমি সিবিআইকে সহযোগিতা করব।’’
এর আগে উপেন জানিয়েছিলেন, তদন্তে সিবিআইয়ের গাফিলতি দেখলে তিনি আদালতকেজানাবেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সিবিআই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে এদিন জানিয়েছেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy