সংক্রমণে দ্রুত রাশ টানতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। ছবি পিটিআই।
করোনার তৃতীয় ঢেউ রুখতে এ বার উৎসবের মরসুমে সংযমের কথা গোড়া থেকে বার বার বলেছে কেন্দ্র। কিন্তু তার পরেও পুজোর সময়ে কোভিড-বিধি উড়িয়ে মণ্ডপ চত্বর ও রাস্তায় জনজোয়ারের সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। ভিড় কম হয়নি অন্য অনেক জেলাতেও। এর মাসুল গুনে দুর্গাদশমী থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহে শুধু কলকাতায় সংক্রমিতের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর)। শুধু তা-ই নয়, এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২২ অক্টোবর রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। সংক্রমণে দ্রুত রাশ টানতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। কেরলে ওনামের পরে কোভিড-পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার জলজ্যান্ত উদাহরণ মজুত থাকা সত্ত্বেও পুজোর মরসুমে ভিড় ঠেকাতে রাজ্য এত ‘গা-ছাড়া’ ভাব দেখাল কেন, তা নিয়েও বেশ অবাক স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা।
স্বাস্থ্য মহলের অবশ্য দাবি, কেন্দ্রের চিঠি আসার আগেই সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে রাজ্য। পুজোর পরে সংক্রমণ মাথা তুলছে বুঝেই মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সমস্ত জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আপাতত পাখির চোখ যত বেশি সম্ভব করোনা পরীক্ষা। গতি বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে টিকাকরণের। পুজো শেষ হতেই নৈশ বিধি ফিরেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বিচারে চালু করা হয়েছে কন্টেনমেন্ট এবং মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন।
রাজ্য এ কথা বললেও, ইতিমধ্যেই বিগড়ে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ চিঠিতে স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্র। আইসিএমআর-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮-১৪ অক্টোবরের সপ্তাহের তুলনায় ১৫-২১ অক্টোবরের সপ্তাহে কলকাতায় সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। সংক্রমণের হার বেড়েছে আরও বেশি (২৭ শতাংশ)। এই তথ্য তুলে ধরে মঙ্গলবার ভূষণ বলেন, ‘‘পুজোর পরে পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ বেশ বেড়েছে। এ নিয়ে তাদের সতর্ক করে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।’’ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, দেশের প্রথম ২০টি সংক্রমিত জেলার তালিকায় কলকাতা থাকা সত্ত্বেও কী করে ও-রকম প্রবল ভিড়কে রাস্তায় নামার অনুমতি দিল রাজ্য প্রশাসন? এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পুজোয় যে ভিড় দেখা গিয়েছে, তা আতঙ্কের। প্রশাসনের উচিত ছিল, শক্ত হাতে রাশ টানা। কিন্তু তা যে করা হয়নি, তা পুজোর পরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী রেখচিত্র থেকে স্পষ্ট।’’ বুর্জ খলিফা প্যান্ডেলে সাড়া ফেলে দেওয়া শ্রীভূমি-সহ বিভিন্ন মন্ত্রীদের সংস্রব থাকা পুজোয় কেন ভিড় নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়নি, সেই প্রশ্নও উঠছে ঠারেঠোরে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার যদিও দাবি, “করোনা কোথায় ঘাপটি মেরে রয়েছে, তা জানতে অনেক আগে থেকেই সেন্টিনেল সার্ভে শুরু করা হয়েছিল। পুজোর পরে তড়িঘড়ি সপ্তম দফায় ওই সমীক্ষা শুরুর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।”
ভূষণের আশঙ্কা, কলকাতায় সংক্রমণে দ্রুত রাশ টানতে না পারলে, সারা রাজ্যে তা ছড়ানোর গতি বাড়বে। তাঁর অভিযোগ, কলকাতায় সংক্রমণ বাড়লেও, করোনা পরীক্ষা কমে গিয়েছে। চিঠিতে তাই তা বাড়ানোর জন্য রাজ্যকে আরও সক্রিয় হতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব এলাকায় স্বাস্থ্য-বিধি (টেস্ট, ট্র্যাক, ট্রিটমেন্ট, কোভিড-নীতি, টিকাকরণ) মানা হচ্ছে না, সেখানে রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।’’
রাজ্যের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পুজোর পরে যে সংক্রমণ হচ্ছে, তার সিংহভাগই উপসর্গহীন। যা মারাত্মক। সেন্টিনেল সার্ভের মূল উদ্দেশ্যই এই উপসর্গহীন আক্রান্তদের খুঁজে বার করা। সে জন্য জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, সদর হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ২৮টি হাসপাতালের শল্য বিভাগ, স্ত্রী রোগ বিভাগ, দন্ত চিকিৎসার বর্হিবিভাগে আসা রোগীদের নিয়ে ওই সমীক্ষা করা হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ওই ২৮টি হাসপাতাল থেকে ৪০০টি করে নমুনা সংগ্রহের জন্য মোট ১১,২০০ জনের পরীক্ষা করতে হবে। ১ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রকে রিপোর্ট জমা দিতেও বলা হয়েছে।
কোভিড-পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য যখন কড়া হচ্ছে, তখন চিঠিতে কেন্দ্রের পরামর্শ, অন্তত কালীপুজো, দীপাবলি-সহ উৎসবের বাকি মরসুম কোভিড-বিধি মেনে পালনের বিষয়ে তৎপর হোক রাজ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy