Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Stubble Burning

নাড়া সৎকারে ক্যাপসুল দাওয়াই

এই ডি-কম্পোজ়ড ক্যাপসুল কী?

হরিপালের নালিকুলে পুড়ছে নাড়া। ছবি: দীপঙ্কর দে

হরিপালের নালিকুলে পুড়ছে নাড়া। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২৬
Share: Save:

‘রোগ’ আছে। তাই ক্যাপসুলও হাজির।

নাড়া পোড়ানোর ক্ষতি অনেক। তা থেকে চাষি এবং পরিবেশকে বাঁচাতে এক ধরনের ক্যাপসুল বের করেছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। তারা বলছে, ওই ক্যাপসুল দিয়ে তৈরি মিশ্রণের মাধ্যমে নাড়াকে সারে পরিণত করা যায়। ফলে, লাভবান হবেন চাষি। দূষণও হবে না। ধান কাটার পরে খেতে থেকে যাওয়া গাছের অবশিষ্ট অংশকে (নাড়া) না পুড়িয়ে সারে পরিণত করার নিদান অনেক দিন ধরেই দিচ্ছে কৃষি দফতর। কিন্তু এখনও এ রাজ্যে চাষিরা তেমন উৎসাহ দেখাননি। কিন্তু নয়া ক্যাপসুলে সার তৈরি করা অনেক সহজ হবে বলে দাবি করছেন ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থানের (আইএআরআই) বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানান, অনলাইনে বিভিন্ন রাজ্যে ক্যাপসুল পাঠানো শুরু হয়েছে। চাষিরা সরাসরি আবেদন করেও তা কিনতে পারেন।

এই ডি-কম্পোজ়ড ক্যাপসুল কী?

আইএআরআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ক্যাপসুল জল, বেসন এবং গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেই মিশ্রণ সরাসরি জমিতে দেওয়া হয়। ফসলের অবশিষ্টাংশ, আনাজের খোসা এবং খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সার তৈরি করা যায়। ওই ক্যাপসুল তরল অবস্থাতেও পাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরন্তন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফসলের অবশিষ্টাংশকে খুব সহজে ডি-কম্পোজ়ড ক্যাপসুলের মাধ্যমে জৈব সারে পরিণত করা যাচ্ছে।’’

রাজ্যের অন্যতম সহ-কৃষি অধিকর্তা (তথ্য ও সুরক্ষা) অরিন্দম চক্রবর্তী জানান, ক্যাপসুলটির মধ্যে উপকারী ব্যাকটিরিয়া থাকছে। সেগুলিই নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহৃত হলে জমির উর্বরতা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে নাডা পোড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তবে, রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘নাড়া পোড়া একটি জাতীয় সমস্যা। তা বন্ধ করতে আমাদের রাজ্যে প্রচার চলছে। তবে কেন্দ্রের ক্যাপসুল নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সহজে চাষির কাছে ক্যাপসুল পৌঁছনো শুধু নয়, তা ব্যবহার করতে প্রশিক্ষণও দরকার। আমাদের জানানো হলে প্রচারের ব্যবস্থা করা হত।’’

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দূষণ রোধের পাশাপাশি ক্যাপসুল ব্যবহারে বাড়তি লাভ হবে চাষির। কৃষি দফতরের প্রাক্তন যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা (ধান্য উন্নয়ন) মাধবচন্দ্র ধাড়া বলেন, ‘‘খড়কে জৈব সারে পরিণত করে ব্যবহার করলে চাষির লাভ অনেক। এর ফলে জমিতে গাছের যতরকম খাদ্য ও অণুখাদ্যের প্রয়োজন, তা এই জৈব সার থেকে মিলবে। রাসায়নিক সার দেওয়ার প্রয়োজন কম হবে। চাষের খরচও অনেকটাই কমবে। তবে, এই ক্যাপসুল কী ভাবে চাষি কম দামে এবং সহজে পাবেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলেই বাংলার কৃষকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে।’’

চাষিদের অনেকেরই বক্তব্য, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকাতেই তাঁরা নাড়া পোড়ান। হুগলির বলাগড়ের টোনা গ্রামের চাষি পার্থ সেন বলেন, ‘‘সময় এবং খরচ বাঁচাতেই ক্ষতি জেনেও নাড়া পুড়িয়ে দিতে হয়। বিকল্পের কথা কেউ আমাদের বলেনি।’’

তবে, অন্য বিকল্প নিয়ে কৃষি দফতরের প্রচার চলছে। বীরভূম জেলা সহ-কৃষি আধিকারিক (তথ্য) অমর মণ্ডল জানান, কৃষকরা আবেদন করলে ভর্তুকি-মূল্যে খড় মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার যন্ত্র সরবরাহ করতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষি প্রদর্শনী ক্ষেত্রে ওই যন্ত্রের ব্যবহার দেখানো হচ্ছে। নাড়া পোড়ানো বন্ধে ‘রিপার’, ‘ব্রাশ কাটার’ এবং ‘বেলার’-এর মতো কিছু যন্ত্রের ব্যবহারের কথাও বলছে কৃষি দফতর। তার পরেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কড়া আইনি ব্যবস্থার কথাও উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা আশিস বেরা বলেন, ‘‘নাড়া পোড়ানো বন্ধ না হলে আগামী দিনে আমরা মহাসঙ্কটে পড়ব।’’(শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stubble Burning Capsules
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy