Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
rare disease

বিরল রোগে কেন্দ্রীয় নীতি নিয়ে উঠল প্রশ্ন

দীর্ঘ অপেক্ষার পর খসড়া প্রকাশিত হলেও প্রিয়জন হারানোর আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারল না। ক্ষুব্ধ বাবা-মায়ের বক্তব্য, সন্তানের প্রতি তাঁদের আবেগকে আঘাত করেছে বিরল রোগ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:২৭
Share: Save:

প্রতি মাসে দেশের কোনও না- কোনও প্রান্তে বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তান হারানোর যন্ত্রণাকে মেনে নিতে বাধ্য হন পরিজনেরা। এ রাজ্যের বাসিন্দা সাত বছরের বালক অর্নেশ সাহু, উনত্রিশ বছরের যুবক অনির্বাণ সেনের মতো অনেকেই জাতীয় বিরল রোগের নীতির দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর খসড়া প্রকাশিত হলেও প্রিয়জন হারানোর আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারল না। ক্ষুব্ধ বাবা-মায়ের বক্তব্য, সন্তানের প্রতি তাঁদের আবেগকে আঘাত করেছে বিরল রোগ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি।

২০১৭ সালে প্রথম বিরল রোগ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি এনেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা প্রয়োগ করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয় কেন্দ্রের। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নতুন নীতি নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। গত ১৩ জানুয়ারি সেই নীতির খসড়া প্রকাশিত হয়েছে।

খসড়া নীতিতে তিনটি ‘গ্রুপ’-এ ভাগ করে কমবেশি ৫০টি রোগকে এ দেশের মাপকাঠিতে বিরল রোগের ‘স্বীকৃতি’ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘গ্রুপ ওয়ান’-এর অন্তর্গত রোগগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্র এককালীন ১৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করবে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনার আওতাধীন পরিবারগুলিই এই সুবিধা পাবে। তবে সাহায্যপ্রাপ্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে রাজ্যের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। ‘গ্রুপ টু’ এবং ‘গ্রুপ থ্রি’-র অন্তর্গত রোগগুলির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের বিবেচনার বিষয়টি রাজ্যের কোর্টে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিরল গ্রুপের রোগীদের নিয়ে গঠিত একাধিক গোষ্ঠীর সদস্যদের বক্তব্য, খসড়া নীতিতে তাঁদের উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটেনি।

গত ১২ ডিসেম্বর মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ অনির্বাণ সেনের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তৃষা মুখোপাধ্যায়ের। ফেব্রুয়ারিতে পা ব্যথা, জ্বর নিয়ে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। চার মাসের মধ্যে কার্যত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন অনির্বাণ। ভেলোরে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, রক্তের বিরল অসুখ হয়েছে তাঁর। ‘পোয়েমস সিনড্রোম’ নামে সেই অসুখে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে জন্য প্রয়োজন ১৬ লক্ষ টাকা। তার পর কেমোথেরাপির খরচও রয়েছে। রেজিস্ট্রির পরে বিয়ে না-হলেও অনির্বাণকেই স্বামী মানেন তৃষা। শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ি— দুই বাড়ির দায়িত্বের পাশাপাশি স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে লড়াই করছেন তিনি। তৃষার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সাহায্যের আশায় রোজ ফোন করি। আমাদের মতো পরিবারের কথা তো সরকার ভাবতে পারত!’’

ন’বছরের বালিকা দেবস্মিতা ঘোষ জিনঘটিত রোগ ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি’তে আক্রান্ত। দেবস্মিতার রোগ খসড়ায় ‘গ্রুপ থ্রি’র অন্তর্গত। দেবস্মিতার মা তথা কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘দেড় বছর আগে মেয়ে বসতে পারত। এখন তা-ও পারছে না। গত বছর সারা দেশে এসএমএ আক্রান্ত ৩০টি বাচ্চা মারা গিয়েছে। এই রোগের চিকিৎসা নেই তা নয়। গরুর রক্ষায় তহবিল থাকে। আর শিশুদের রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারের টাকা নেই!’’ ‘ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রফি’-তে আক্রান্ত অর্নেশের বাবা ইন্দ্রজিৎ সাহু বলেন, ‘‘এই নীতি চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। এসএসকেএম-কে বিরল রোগের চিকিৎসায় সেন্টার অব এক্সেলেন্স করবে বলছে। কিন্তু তার খরচ দেবে অনুদানের ভরসায় থাকা তহবিল!’’

বিরল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার অধিকার নিয়ে কাজ করা সর্বভারতীয় সংগঠনের প্রধান প্রসন্ন সিরোল জানান, পুরনো নীতিতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল ছিল। চিকিৎসার খরচ দেওয়ার প্রশ্নে রাজ্য-কেন্দ্রের ভাগ সুনির্দিষ্ট ছিল। তিনি বলেন, ‘‘খসড়ায় বলা হয়েছে, তহবিলের জন্য কর্পোরেট সংস্থা এবং সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া হবে। গ্রুপ টু এবং থ্রি রাজ্য সরকারগুলির উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের উপরেই যদি ছাড়া হবে তা হলে নতুন নীতি আনার কী দরকার!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rare Diseases Central Policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy