Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

কেন্দ্র-রাজ্যের হুঁশিয়ারির মুখেই আজ ডাক ধর্মঘটের

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মীদের ক্যাজুয়াল লিভ মঞ্জুর করা হবে না।

সিএএ, এনআরসি-র বিরুদ্ধে ও ধর্মঘটের সমর্থনে ব্যারাকপুরে বাম ও কংগ্রেসের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

সিএএ, এনআরসি-র বিরুদ্ধে ও ধর্মঘটের সমর্থনে ব্যারাকপুরে বাম ও কংগ্রেসের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

ধর্মঘটে শামিল হলে সরকারি কর্মীদের ‘পরিণাম’ ভুগতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিল কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলায় রাজ্য সরকারও নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, কাজে গরহাজির থাকলে বেতন কাটা হবে। কর্মজীবন থেকে এক দিন বাদও যাবে। পরিবহণ সচল রাখার জন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য। এই দুই সরকারকে আজ, বুধবার দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট করেই ‘জবাব’ দেওয়ার ডাক দিলেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল অবশ্য বলছে, তারা যে কোনও রকম ধর্মঘটেরই বিরুদ্ধে।

অর্থনীতিতে মন্দা, কর্মসংস্থানের বেহাল দশার প্রতিবাদ ও রুটি-রুজির সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার দাবিতে এবং সেই সঙ্গে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতায় আজ দেশ জুড়ে ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। একই সঙ্গে কৃষক সংগঠনগুলি গ্রামীণ ভারত ধর্মঘট ডেকেছে। বাংলায় সিপিএম, কংগ্রেস-সহ ২১টি দল ওই ধর্মঘটকে সমর্থন করছে। তামিলনাড়ুতে বিরোধী ডিএমকে, মহারাষ্ট্রে শাসক শিবসেনার মতো দল ধর্মঘটের পক্ষে। কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলিতেও ধর্মঘট ভাল সাড়া ফেলবে বলে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা। সিএএ, এনআরসি-র বিরোধিতা এবং জেএনইউয়ে হামলার প্রতিবাদে নানা রাজ্যেই আজকের ধর্মঘটের ভাল প্রভাব পড়বে বলেই তাঁদের দাবি। কয়লা, তেল, প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রের কর্মীরাও এ বার ধর্মঘটে যোগ দেবেন বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মীদের ক্যাজুয়াল লিভ মঞ্জুর করা হবে না। কাজে না এলে বেতন কাটা হবে, তার পাশাপাশি শাস্তিমূলক পদক্ষেপও হতে পারে। সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন অবশ্য বলেছেন, তিন মাস আগেই ধর্মঘটের প্রয়োজনীয় নোটিস দেওয়া হয়েছে। সরকারের হুঁশিয়ারিতে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন না। কলকাতা ও রাজ্যের নানা জায়গাতেও আজ বাম ও কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে মিছিল-পিকেটিং করবেন।

আরও পড়ুন: মিছিল সামলাতে সংযম চান সিপি

কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের একই ধরনের নির্দেশিকাকে স্বভাবতই নিশানা করেছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মতে, ‘‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ভাষা ও ভাবভঙ্গি ছাড়া ধর্মঘট নিয়ে ধমকের সুর স্পষ্ট। ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দুই ব্যবসাদারকে দেওয়ার মতো জবাব একটাই— জবাব হবে ধর্মঘটেই!’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে এ রাজ্যে সরকারি কর্মীরা কাজে না গেলে তাঁদের শাস্তি দেবে রাজ্য সরকার। এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে উদার, বিজেপি-বিরোধিতার মুখ বলবেন! আবার দ্বিচারিতা!’’

আরও পড়ুন: ধর্মঘট নিয়ে তরজার মাঝে চিন্তা পরীক্ষায়

ব্যারাকপুরে এ দিন বাম-কংগ্রেসের যৌথ মিছিলের পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জমায়েতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও ধর্মঘটে দুই সরকারকে জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘ধর্মঘটের বিষয় সমর্থন করি কিন্তু ধর্মঘটকে নয়— এটা দ্বিচারিতা! জোর করে ধর্মঘট ভাঙা হচ্ছে কি না, তার পরীক্ষা হবে বুধবার।’’ রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্যে বলেছেন, ‘‘সিএএ, এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মঘটের অস্ত্র ব্যবহার করে করে অকেজো হয়ে গিয়েছে। ধর্মঘটের এই সংস্কৃতিকে আমরা সমর্থন করি না।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার বামেদের কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা কেন রাস্তায় নামব? যাদের আমরা দৌড় করাচ্ছি, তারা রাস্তায় নামবে! সুজনবাবুর কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনিই দেশ চালাচ্ছেন! মুখ্যমন্ত্রীর আঁচলের তলায় তাঁরা ধর্মঘট সফল করার চেষ্টা করছেন!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE