প্রতীকী ছবি।
খুব শীঘ্রই একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও গ্রাম সড়ক যোজনায় ফের টাকা দিতে শুরু করবে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, সব ঠিকমতো চললে চলতি মাস থেকেই টাকা ছাড়া শুরু হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আশ্বাস দিয়েছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যেখানে যা গাফিলতি ছিল, তা শুধরে নেওয়া হয়েছে। আবাস ও গ্রাম সড়ক যোজনার নাম বদলের ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। টাকা ছাড়তে শুরু করার ইঙ্গিত দিয়ে আজই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে গ্রাম সড়ক যোজনায় প্রায় ৮৫৭ কিলোমিটার রাস্তার উন্নতির প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। এতে খরচ হবে প্রায় ৫৮৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে কেন্দ্র দেবে প্রায় ৩৪৩ কোটি টাকা।
মঙ্গলবারই বেলপাহাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একশো দিনের কাজের টাকা, গ্রামের রাস্তা ও আবাস যোজনার ‘প্রাপ্য টাকা’ না দিলে কেন্দ্রের জিএসটি না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “তার আর দরকার হবে না। খোদ মুখ্যসচিব আমাদের চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সমস্ত নিয়ম মেনে চলার আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীও দিল্লি এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। ফলে জট কেটে গিয়েছে।’’ রাজ্যের হিসেবে, একশো দিনের কাজে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং গ্রাম সড়ক যোজনায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বকেয়া রয়েছে।
রাজ্যের জন্য ফের অর্থ মঞ্জুর শুরু হলেও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গের টাকা আটকে যাওয়া অন্য রাজ্যের সামনেও ‘দৃষ্টান্ত’ হয়ে রইল। সূত্রের ব্যাখ্যা, গত ডিসেম্বর থেকে একশো দিনের কাজের টাকা আটকানোয় মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাতে স্পষ্ট বলা রয়েছে, প্রকল্পের রূপায়ণে কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে। অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগ পেলে কেন্দ্র তদন্ত করতে পারে। প্রয়োজনে অর্থ মঞ্জুর বন্ধ করতে পারে। মন্ত্রকের বক্তব্য, একশো দিনের কাজে গরমিল হলে পশ্চিমবঙ্গের মতো যে কোনও রাজ্যেই যে অর্থ মঞ্জুর বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তার দৃষ্টান্ত তৈরি হল।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলার চেষ্টা করছিল, একশো দিনের কাজের মতো বড় প্রকল্পে ভুল হতেই পারে। ১৫টি জেলায় কেন্দ্রের দল গিয়ে আর্থিক গরমিল খুঁজে বের করেছিল। তাকেও সামান্য অঙ্ক বলে তৃণমূল দাবি করেছিল। কিন্তু বাস্তব হল, ওই গরমিল নমুনা মাত্র। আসল গরমিল আরও বেশি। রাজ্যকে তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। গত ৭ নভেম্বর রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার দিল্লিতে এসে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানেও ‘ইতিবাচক’ বার্তা মিলেছে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও গ্রাম সড়ক যোজনার ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে অর্থ মঞ্জুর বন্ধ হয়েছিল, যুক্তি কেন্দ্রের। রাজ্য সরকার প্রকল্পে ‘প্রধানমন্ত্রী’-র নাম বদলে ‘বাংলা’ করে দিয়েছিল। যুক্তি ছিল, রাজ্যও অর্থ দিচ্ছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির সময়েই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, কেন্দ্র ও রাজ্য কে কত অর্থ দেবে, প্রকল্পের নাম কী হবে। পরে তার অন্যথা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে মুখ্যসচিব চিঠি লিখে জানিয়েছেন, নাম বদলে ভুল শোধরানো হয়েছে। আর বিচ্যুতি হবে না। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সেই আশ্বাস দেন। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধিকর্তা দেবেন্দ্র কুমার রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন সচিবকে চিঠি দিয়ে জানান, রাজ্যের জন্য ৫৮৪.৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, আগামী এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। তা এগিয়ে ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল নেতৃত্ব প্রবল ভাবে চাইছিল, ভোটের আগেই যাতে গ্রামোন্নয়নের তিনটি প্রকল্পে কেন্দ্রের অর্থ আসতে শুরু করে। স্থানীয় বিজেপি নেতারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুর নরম করেছে। তা ছাড়া, মোদীর সরকার গ্রামের মানুষের টাকা আটকে রেখেছে বলে তৃণমূল প্রচার করলে তাতে বিজেপিরও বিপদ হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy