কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের বাজেট হোক বা রাজ্যের, বিরোধী শিবির কিছু বিষয়ে সরব হয় প্রতি বারেই। কিন্তু এ বার কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয় সরকারের বাজেটের একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে বিরোধীরা সমস্বরে সরব। বিষয়টি হল কর্মসংস্থান। কেন্দ্রীয় বাজেটের পরে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা যে-ভাবে সরব হয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বুধবারের বাজেটের পরে সেই বিষয়ে বিরোধীদের নিশানায় রাজ্য সরকারও। এবং এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে যাদের বিদ্ধ হতে হয়েছে বা হচ্ছে, সেই বিজেপি-ও এখন এই নিয়ে নবান্নের বিরুদ্ধে যুযুধান! রাজ্য সরকারের দাবি, বিপুল কর্মসংস্থানের পথ দেখানো হয়েছে নতুন আর্থিক বছরের (২০২৩-২৪) জন্য বাজেটে। আর বিরোধীদের বক্তব্য, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের পথে না-হাঁটলে উপযুক্ত গুণমানের স্থায়ী কর্মসংস্থান কার্যত অসম্ভব।
কয়েক মাস আগে কেন্দ্র জানিয়েছিল, ১০ লক্ষ চাকরি দেবে তারা। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ওই সংখ্যার শূন্য পদে নিয়োগই কর্মসংস্থানের মোড়কে দেখাতে চাইছে কেন্দ্র। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি ক্ষেত্রে বহু শূন্য পদ পড়ে রয়েছে। সেগুলিতে নিয়োগের কোনও বার্তা নেই রাজ্য বাজেটে। বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থানের দিশাও নেই তাতে।
রাজ্য সরকারের দাবি, কেন্দ্রীয় স্তরে বেকারত্ব যেখানে ৪০% বেড়েছে, সেখানে রাজ্যে কমেছে সমহারে। বানতলা চর্মনগরী, ডেউচা পাঁচামি, জঙ্গলসুন্দরী, শিল্প করিডর, লজিস্টিক্স পার্ক, শিল্পতালুক, গ্যাস প্রকল্প ইত্যাদিতে বেশ কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। ছোট-ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রেও লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাজপুর সমুদ্রবন্দর (বাজেটে উল্লেখ নেই) প্রকল্পকে ঘিরেও বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য, ওই সব প্রকল্পের কথা বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে রাজ্য। কিন্তু পরিকাঠামো বা শিল্প ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না-হলে স্থায়ী উন্নয়ন এবং দীর্ঘস্থায়ী কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি করা মুশকিল। পরিকাঠামো খাতে কয়েক বছর ধরে অন্তত ৩০% করে খরচ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র। বুধবার রাজ্যের বাজেট পেশ হওয়ার পরে অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন, রাজ্যের মোট খরচের প্রায় ৬০% খরচ হয় সামাজিক খাতে, ৩৫% কৃষি ও সহযোগী ক্ষেত্রে এবং ৮% পরিকাঠামোয়। এই তথ্যকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের বক্তব্য, শিল্প-পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয় না-বাড়লে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। পরিকাঠামো সংক্রান্ত পূর্ত দফতরে এ বার বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ কোটি টাকা। ছোট-ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে তার পরিমাণ ৫৮ কোটি। যদিও পঞ্চায়েত দফতরে বরাদ্দ বেড়েছে ১৪২১ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী বলেন, “রাজ্য সরকার নিয়োগকারী সংস্থা নয়। শিল্প গড়লে ভাল চাকরি হবে। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের দিশা রাখতে হবে। মূলধনী খাতে খরচ বাড়ালে সড়ক-রেল প্রকল্পে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। যেটা করছে কেন্দ্র।” রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গ্রামীণ সড়ক খাতে রাজ্য এ বছর তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। শিল্প করিডর, শিল্পতালুক এবং শিল্পের উপযোগী পরিকাঠামো তৈরিতে পদক্ষেপ করেছে নবান্ন। কিন্তু কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী আবাস বা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা আটকে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। রাজ্য বরং গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টাই করছে।”
চলতি বাজেটে ‘ভবিষ্যৎ ঋণ কার্ড’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছে রাজ্য। দাবি, তাতে দু’লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী স্বনির্ভর হতে পারবেন। তাতে ছোট কোনও উদ্যোগ শুরু করতে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। প্রকল্প-ব্যয়ের ১০% বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দেবে রাজ্য। বাকি ১৫% গ্যারান্টিও দেওয়া হবে। এই খাতে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বাজেটে। এতেও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন শীর্ষ কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy