Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
এনএইচ ১০ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
Teesta River

‘নজরদারি করবে, খরচের প্রয়োজন নেই’

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নবান্ন’-এ কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার, মালদহের প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন।

তিস্তা নদী।

তিস্তা নদী। —ফাইল চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

তিস্তাকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত আগেই ছিল। এ বার তাতে যোগ হতে চলেছে সিকিম, কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কও। গত বছর অক্টোবরে সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদে বিপর্যয়ের পরে তিস্তার চেহারা পাহাড়ি এলাকায় পাল্টাতে শুরু করে। সম্প্রতি আবহাওয়া দফতরের উপগ্রহ চিত্রে তা ধরাও পড়েছে। তার মধ্যে গত এক মাসের প্রবল বৃষ্টিতে তিস্তার জলস্ফীতি ক্রমশ বাড়ছে। ভাঙছে দুই পার। সে সঙ্গেই ভাঙছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আপাতত পুরোপুরি বন্ধ সিকিমের এই ‘লাইফলাইন’। তিস্তার এই আগ্রাসী পরিস্থিতি ঠেকাতে অনেকেরই পরামর্শ, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমীক্ষা, ‘মাস্টারপ্ল্যান’-এর। যদিও কেন্দ্র বা রাজ্যের তরফে তা এখনও ঘোষণা হয়নি। বদলে, চলছে চাপান-উতোর।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নবান্ন’-এ কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার, মালদহের প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বৃষ্টিতে জল জমা,বন্যা পরিস্থিতি, তিস্তা, ভাঙন নিয়ে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে, বর্ষার মরসুমে প্রয়োজন ছাড়া, পাহাড়কে এড়়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সড়কটির জন্য কোনও আলাদা করে খরচ করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে কেন্দ্র, সেনাবাহিনীকে সব জানানোর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিস্তা বর্ষায় ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। ধসে রাস্তা বন্ধ। পার ভেঙেছে। পূর্ত দফতরকে নজরদারি করতে হবে। টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই। ওটা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ করবে। দার্জিলিঙের দিকেও পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে।’’ এর পরেই তিনি সমস্যা হলেও দার্জিলিং ও কালিম্পঙের জেলাশাসকদের সেনা ও কেন্দ্রকে তা দ্রুত জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিকিমে ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। সব জল সেখানে টেনে নিচ্ছে। কেন্দ্র জেনেও কিছু করেনি। আর বর্ষায় এর চেহারা বদল হচ্ছে।’’

ঘটনাচক্রে, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাংও গ্যাংটকে এ দিন জানিয়েছেন, সিকিমে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ‘দশা’র জন্য সে রাজ্যের রোজ ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তিনি রাস্তাটি কেন্দ্রকে নিয়ে নেওয়ার নতুন করে আবেদনও করেছেন। দিল্লিতে নতুন সরকার তৈরির পরে, সেখানে গিয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী একই দাবি করে এসেছেন।

একই দাবির কথা দিল্লিতে জানিয়েছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও। তিনি ইতিমধ্যে রাজ্যের পূর্ত দফতরের অধীনে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পরিস্থিতি ‘ভাল নয়’ বলে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানিয়েছেন। সাংসদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে রাস্তাটি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ দিকে অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধেয় জাতীয় সড়ক নিয়ে সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের। যদিও এ ব্যাপারে রাত পর্যন্ত আর কিছু জানা যায়নি।

এ দিন বৃষ্টি কিছুটা কমায় এ রাজ্যে এনএইচ ১০ লাগোয়া এলাকায় নতুন করে ধসের খবর নেই। সিকিমের দিকে কোথাও কোথাও মাটি ধসেছে। বৃষ্টি কমায় পরিস্থিতি তুলনায় ভাল দার্জিলিং পাহাড়ের। সেখানেও নতুন করে কোথাও ধস নামার খবর মেলেনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই জাতীয় সড়কটি দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীর ‘বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশন’ (বিআরও)-এর হাতে ছিল। কয়েক বছর আগে, রাস্তাটির দুই রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়। এ রাজ্যে পূর্ত দফতর সেটির দেখভাল করছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে তা নিয়ে কী হবে, সে প্রশ্ন উঠে গেল। কালিম্পং জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেন্দ্র দ্রুত রাস্তাটির দায়িত্ব নিয়ে ভাল। না হলে, আমরা যা কাজ করা শুরু হয়েছে, তা দেখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Teesta River North Bengal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy