Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অমর্ত্যের কণ্ঠরোধে ক্ষমতার স্পর্ধা দেখছে শহর

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রে ‘গরু’, ‘গুজরাত’, ‘হিন্দুত্ব’ ও ‘হিন্দু’র মতো কিছু শব্দ ব্যবহার নিয়ে ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞায় এমনই সব প্রশ্ন উঠেছে শহরের আনাচকানাচে। সেন্সর কর্তাদের বক্তব্য অর্থনীতিবিদের মুখে এই ধরনের কথা, ‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।

অমর্ত্য সেন।

অমর্ত্য সেন।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫৩
Share: Save:

কাক ডাকিতেছে।

... (বিইইপ) চরিতেছে।

বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ কি এ ভাবেই পড়তে হবে এ বার? ‘গরু’ শব্দের উচ্চারণের অধিকারেও তো হস্তক্ষেপ। অথচ ‘বর্ণপরিচয়’-এর প্রথম ভাগের অষ্টম পাঠে লেখা আছে ‘‘কাক ডাকিতেছে। গরু চরিতেছে।’’ ক’দিন পরে কি কেন্দ্রীয় কোনও বোর্ড নিষেধাজ্ঞা জারি করবে তাতেও?

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রে ‘গরু’, ‘গুজরাত’, ‘হিন্দুত্ব’ ও ‘হিন্দু’র মতো কিছু শব্দ ব্যবহার নিয়ে ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞায় এমনই সব প্রশ্ন উঠেছে শহরের আনাচকানাচে। সেন্সর কর্তাদের বক্তব্য অর্থনীতিবিদের মুখে এই ধরনের কথা, ‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।’ ফলে আরও এক বার গণতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা এবং ক্ষমতার স্পর্ধার প্রসঙ্গটি খবরের শিরোনামে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বিদেশেও।

প্রসঙ্গটি উঠতেই কবি শঙ্খ ঘোষ বললেন, ‘‘স্পর্ধা যে কত দূর পৌঁছচ্ছে, ঘটনাটি তার এক লজ্জাজনক নজির।’’ নবনীতা দেবসেনের প্রশ্ন, ‘‘এটা তো অ্যাকাডেমিক বিষয়, বাণিজ্যিক বিনোদন তো নয়। এতে সেন্সরশিপের বিষয়টি ওঠেই বা কী করে?’’

যে সব শব্দের ব্যবহার নিয়ে এত হইচই, সে সব শব্দ কি সত্যিই আপত্তিকর বলে মনে করে সরকার? ‘‘তবে যে রোজ রোজ খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেলে এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে?’’ প্রশ্ন তুললেন লেখিকা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও বিস্মিত, ‘‘এ সব শব্দ তো সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় বহুলচর্চিত। এ নিয়ে তো ঢাক ঢাক গুড়গুড়ের কিছু নেই।’’

আরও পড়ুন:

অধিকারী ‘গড়ে’ শিশিরকে ধমক মমতার

তবে কি নিষেধাজ্ঞার চৌহদ্দি বাড়তেই থাকবে? সাংস্কৃতিক ইমার্জেন্সির মধ্যে দিয়ে যাবে দেশ? শীর্ষেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘এটা কালচারাল ইমার্জেন্সি কি না, জানি না। তবে যে অতিসক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’’ তবে অমর্ত্য সেনের মতো মানুষের মন্তব্যে কাঁচি চলার ইতিবাচক দিকও আছে বলে মনে করেন নবনীতা। কারণ এতে করে শিল্প এবং মানুষের বাক্‌-স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক আরও গুরুত্ব পাচ্ছে দেশ জুড়ে। নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত তাতেও আশার আলো দেখেন না। এ বিতর্ককে ‘ছায়ার সঙ্গে কুস্তি’ বলেই মনে করছেন তিনি।

রাজ্য সেন্সর বোর্ডের সদস্য মহুয়া ধর অবশ্য এই ছবি নিয়ে আলাদা ভাবে হইচইয়ের কারণ দেখেন না। মহুয়াদেবীর বক্তব্য, ‘‘প্রথমত রাজ্য সেন্সর বোর্ডে এই সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় ভাবে হয়েছে। সেখানে অন্যদের ক্ষেত্রেও যা আইন, অমর্ত্য সেনের ক্ষেত্রেও তা-ই।’’ কিন্তু তাতে আখেরে লাভ? অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার মনে করালেন, ‘‘যখন যে জায়গাটা মিউট করা হয়, সেটা নিয়েই দর্শকদের আগ্রহ বেশি তৈরি হয়। যাঁরা সেন্সর করলেন, তাঁরা কি তা মাথায় রেখেছিলেন?’’ নিন্দায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। টুইটারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রতিটি বিরোধী কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এ বার অমর্ত্য সেন।’’

যাঁর মন্তব্য নিয়ে এত তোলপাড়, সেই অমর্ত্য অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ নিয়ে তাঁর কিছু বলা শোভন নয়। কিন্তু সেন্সর কর্তাদের সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই মেনে নিতে রাজি নন ছবির পরিচালক সুমন ঘোষ। তিনি বললেন, ‘‘ছবি অক্ষত অবস্থাতেই দেখাব। ছাড়পত্র না দিলে অনলাইন মাধ্যম তো আছেই।’’

শিল্পে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নন অভিনেত্রী তথা বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সেন্সরের বিরুদ্ধেও নন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সিনেমাটা
দেখিনি, সেন্সর বোর্ডের বৈঠকেও ছিলাম না। শুধু অমর্ত্য সেনের মন্তব্যের উপরে ভরসা করে আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। কারণ ওঁর বক্তব্য পক্ষপাতদুষ্ট। বাছাই করা বিষয়ে বাছাই করা মন্তব্য করে
থাকেন উনি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE