মধ্যশিক্ষা পর্ষদই হোক, কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। রাজ্য বোর্ডের সমস্ত পড়ুয়ার ভবিষ্যতের স্বার্থে সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র কেন সিবিএসই-র ধাঁচে হবে না?
প্রশ্নটা এ বার সামনে উঠে এল। যার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিল ডাক্তারির জয়েন্ট এন্ট্রাস ঘিরে সাম্প্রতিক টানাপড়েন। অভিভাবক মহলের আক্ষেপ— সিলেবাস ও প্রশ্নের রকম-সকম সিবিএসই (সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন)-র মতো হলে সর্বভারতীয় স্তরের ডাক্তারি প্রবেশিকায় (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট, সংক্ষেপে নিট) রাজ্যের ছেলেমেয়েদের এমন নাস্তানাবুদ হতে হতো না। স্বাস্থ্য দফতরকে দিল্লি গিয়ে বৈঠক
করতে হতো না। সুপ্রিম কোর্টে
বারবার আবেদন নিবেদনেরও দরকার পড়ত না।
শুধু নিট নয়। সর্বভারতীয় স্তরে গবেষক বাছাইয়ের পরীক্ষাতেও (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট, সংক্ষেপে নিট) নিয়ন্ত্রক সেই সিবিএসই। বস্তুত সর্বভারতীয় স্তরে অধিকাংশ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সিবিএসই ধাঁচে হয়ে থাকে। অভিযোগ, বাংলা বোর্ডের পাঠ্যক্রম তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-হওয়ায় এখানকার ছেলেমেয়েরা টক্করের ময়দানে পিছিয়ে পড়ছে।
এমতাবস্থায় কলকাতার অনেক স্কুল তৈরি হতে শুরু করেছে। যেমন সাউথ পয়েন্ট। দু’বছর আগে ওখানে সিবিএসই পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে। তবে আংশিক ভাবে। পড়ুয়ারা এত দিন ইচ্ছে করলে বাংলা বোর্ডেও থাকতে পারত। এ বার সিংহভাগ অভিভাবকের সায় নিয়ে সাউথ পয়েন্ট পুরোপুরি চলে যাচ্ছে সিবিএসই’তে। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ‘‘২০১৮-য় আমাদের শেষ মাধ্যমিক ব্যাচ পরীক্ষা দেবে। তার পরে সব সিবিএসই।’’
গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলও সিবিএসই’তে চলে গিয়েছে গত বছর। ‘‘আমরা চাই, সর্বভারতীয় পরীক্ষায় আমাদের মেয়েরা যেন সমস্যায় না পড়ে। তা ছাড়া অভিভাবকরাও চেয়েছেন।’’— মন্তব্য কর্তৃপক্ষের। সাউথ পয়েন্টের এক কর্তার পর্যবেক্ষণ, ‘‘মেধা না পাঠ্যক্রম— প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কোনটা বেশি সহায়ক, তা বিচারের সময় আসেনি। চাপটা মূলত অভিভাবকদের তরফেই এসেছে।’’ যদিও গোখেলের এক অভিভাবক তথা শিক্ষাবিদের দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কেরল, জম্মু-কাশ্মীর, মণিপুর বা গুজরাতের নিজস্ব বোর্ডের সিলেবাস ধরা-বাঁধা গতের বাইরে গিয়ে ভাবতে শেখাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সিবিএসই তুলনায় এগিয়ে।’’ সাউথ পয়েন্টের এক শিক্ষকের অভিমত, ‘‘সিবিএসই’তে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের সঙ্গে ছোটবেলা থেকে সড়গড় করে দেওয়া হয়। তাতে কম্পিটিশনে এমনিতেই ওরা এক ধাপ এগিয়ে থাকে।’’ সিবিএসই’র এক কর্তাও বলেন, ‘‘আমাদের সিলেবাস বাস্তবধর্মী ও বিজ্ঞানসম্মত। তাই নিট বা নেট পরিচালনার ভার আমরা পেয়েছি।’’
প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। তবে সিবিএসই কোর্সের ‘উৎকর্ষ’ সম্পর্কে সংশয়ের সুরও মজুত। ‘‘সিবিএসই-র ব্যাপ্তি অনেক বেশি। কিন্তু সেই অর্থে পঠন-পাঠনের গভীরতা নেই। বরং রাজ্যের সিলেবাসে বিষয়ের বৈচিত্র্য কম হলেও গভীরতা যথেষ্ট।’’— বলছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান শিক্ষক স্বামী বেদপুরুষানন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘সিলেবাস বদলের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদেরও প্রকৃত প্রশিক্ষণ জরুরি।’’
নরেন্দ্রপুর বাংলা বোর্ড থেকে সরছে না। ঠিক যেমন পাঠভবন বা হেয়ার স্কুলও বোর্ড পাল্টাতে নারাজ। পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা সান্ত্বনা রায়ের মন্তব্য, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস পাল্টেছে, বদলেছে প্রশ্নের ধরন। আগামী বছর মাধ্যমিকেও বদল আসছে। সেই হিসেবে সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে সাযুজ্য থাকবে।’’ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসের বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে এগারো-বারোর সিলেবাস অনেকটা সিবিএসই-র ধাঁচে সাজানো হয়েছে। সেই মতো মাধ্যমিকেও প্রশ্নের ধরন হবে সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত।’’ মহুয়াদেবীর দাবি, ‘‘আমাদের কোর্স অনেক বিস্তৃত।’’
সিবিএসই ‘মডেলে’ না-হলেও বদল আসছে আইসিএসই (ইন্ডিয়ান সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন)-র প্রশ্নপত্রে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১৮ থেকে তাঁরা সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক প্রশ্নের ধাঁচ অনুসরণ করবেন। আইসিএসই-র মুখ্য কার্যনির্বাহী সম্পাদক জি অ্যারাথুন বলেন, ‘‘সিবিএসই’তে পরীক্ষার্থী বেশি, তাই সাফল্যের হার বেশি। সিবিএসই বোর্ডে না-পড়লে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাব— এমন ধারণা ভিত্তিহীন।’’
সিবিএসই-ই উত্কৃষ্ট বিকল্প, এই মুহূর্তে সে কথা জোর দিয়ে বলতে চাইছেন না শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও। ‘‘সব স্কুল সিবিএসই’র আওতায় এলে আঞ্চলিক ভাষাগুলো বিপদে পড়বে।’’— আশঙ্কা তাঁর। অবশ্য বিজ্ঞানের মতো কিছু বিষয় সিবিএসই যদি বেশি সময়োপযোগী ভাবে পড়ায়, তা হলে সেটি গ্রহণে সমস্যা নেই বলে পবিত্রবাবু মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy