(বাঁ দিকে) সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিবিআইয়ের কর্তারা। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ঘটনায় সন্দীপ ও অভিজিৎকে আগেই আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সন্দীপকে ১৪ দফায় প্রায় ২০০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিজিৎকে আট দফায় প্রায় ৪০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিজিতের পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী অফিসারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকে সন্দীপ ও অভিজিতের মোবাইলে সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা হয়েছিল, দেখা গিয়েছে কল ডিটেলসে। ১৪ অগস্ট পর্যন্ত সন্দীপ ও অভিজিতের কথা হয়। টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী, সন্দীপ ও অভিজিতের ঘন ঘন সাক্ষাতের তথ্য মিলেছে। অভিজিৎ ৯ থেকে ১৪ অগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত আর জি করে যাতায়াত করেছেন, মিলেছে তথ্য।
তদন্তকারীদের কথায়, ৯ অগস্ট চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃতদেহ সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল। পুলিশের তরফে অভিজিৎ ও তাঁর সহযোগীরা প্রথম ওই সেমিনার হলে পৌঁছন। এর পরে ওই সেমিনার হলে থিকথিকে ভিড় হয়ে যায়, দাবি তদন্তকারীদের। সে ক্ষেত্রে ‘প্লেস অব অকারেন্স’ অর্থাৎ মৃতদেহের আশপাশের নমুনা রক্ষার মূল দায়িত্ব ছিল অভিজিতের। কিন্তু অভিজিৎ ওই দায়িত্ব পালন করেননি। খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় একের পর এক তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। খুন ও ধর্ষণের ঘটনাস্থলের সমস্ত নমুনা কার্যত নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
তদন্তকারীদের কথায়, ঘটনাক্রম অনুযায়ী সেমিনার হলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও টালা থানার ওসি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি মাত্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। তারও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ধোঁয়াশা ও অস্পষ্ট। মৃতদেহ দ্রুত দাহ করার ক্ষেত্রেও অভিজিতের অতিসক্রিয়তার নানা ইঙ্গিত মিলেছে বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের দাবি, দ্বিতীয় ময়না তদন্তের দাবি করেছিলেন চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবা-মা। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ওসি সক্রিয় ভূমিকা পালন | করেননি। তা ছাড়া মূল অভিযুক্তের তদন্তের ক্ষেত্রে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন অভিজিৎ, এমন নানা সূত্রও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি।
তদন্তকারীদের দাবি, ১০ অগস্ট ওই ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। তার পরেও সন্দীপের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ফোনালাপের বিষয়টি সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীদের কথায়, সন্দীপ ও অভিজিতের কথাবার্তা হওয়ার পরে তাঁরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরও কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলেও 'কল ডিটেলস' অনুযায়ী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রভাবশালী যোগের তথ্য উঠে আসছে। তদন্তকারীদের দাবি, সন্দীপের গাড়ির চালককে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র মিলেছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, "ঘটনার চার দিন পরে সন্দীপের বয়ান নথিভুক্ত করেছিলেন সিটের তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু সন্দীপের মোবাইল ফোনের 'কল ডিটেলস' পরীক্ষা করা হয়নি। সন্দীপের ক্ষেত্রে এক রকম দায়সারা তদন্ত করা হয়েছিল। কোনও কিছুই গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখা হয়নি।" সূত্রের খবর, সিটের চার জন তদন্তকারী অফিসারকে তলব করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শনিবার লালবাজারে এক শীর্ষ
কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, "একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছিল। সন্দীপ ও অভিজিৎকে জেরা করে মূল চক্রান্তকারীদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের একের পর এক পর্দা সরতে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।" তাই অভিজিৎ এবং সন্দীপকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা জরুরি হয়ে উঠতে পারে, দাবি সিবিআইয়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy