শাসক দলের সঙ্গে সারদার সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের একদা ঘনিষ্ঠ আরও এক জন। সোমবার প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানকে জেরা করে সিবিআই। কুণাল ও আসিফকে মুখোমুখি জেরা করা হয় বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
এ দিন বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই সদর দফতরে হাজির হন আসিফ। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা জেরা শেষে সন্ধে পৌনে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। আসিফ বলেন, “২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দলের নেতাদের সঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরেছি। যা দেখেছি, যা শুনেছি, যা বুঝেছি সবই সিবিআইকে বলেছি।” আজ, মঙ্গলবার ফের সিবিআই দফতরে হাজিরা দেবেন তিনি।
সিবিআই সূত্রের খবর, ব্যবসায়ী আসিফ এক সময় কয়েক জন বাম নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কাছাকাছি আসেন। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। সারদার ‘কলম’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আসিফ। ২০১৩ সালে সারদা বন্ধ হওয়ার পরে ‘আজকের কলম’ নামে সংবাদপত্র খোলেন। মাস কয়েক আগে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। আসিফ খানের পার্ক সার্কাসের বাড়িতে তল্লাশিও করেছে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন প্রথমে আসিফকে একা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পরে কুণালের মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়া হয়। সারদার সংবাদমাধ্যম ব্যবসায় কী ভাবে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল, তা থেকে কারা কারা সুবিধা পেয়েছেন, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ‘আজকের কলম’ তৈরির টাকা আসিফ কোথা থেকে পেয়েছিলেন, তা জানতে চাওয়া হয়। আসিফ কিছু উত্তর দিয়েছেন বলেও খবর। জেরা থেকে বেরিয়ে আসিফ বলেন, “যা বলার গোয়েন্দাদের বলেছি। প্রকাশ্যে বললে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে।”
ও দিকে আবার সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর যোগ নিয়ে এ দিন ফের এক প্রস্ত সরব হন কুণাল ঘোষ। সন্ধ্যায় সিবিআই দফতরের দোতলা থেকে একতলায় নামার সময় তিনি বলেন, “যে নেত্রী তহলকা কাণ্ডে সততার প্রতীক হিসেবে ইস্তফা দিয়েছিলেন, তিনি সারদার পর দলে তদন্ত কমিশন গড়ছেন না কেন!” জেল থেকে ইডি-কে লেখা চিঠিতে কালিম্পঙের ডেলোয় সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায়ের যে বৈঠকের কথা লিখেছিলেন তিনি এ দিন সাংবাদিকদের সামনে সেই বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন কুণাল। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই চিঠিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে যে সব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলোও এ দিন প্রকাশ্যে বলতে দেখা যায় তাঁকে।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলকর্মী প্রশান্ত প্রামাণিক এবং কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বাদল ভট্টাচার্যকেও এ দিন ডেকে পাঠায় সিবিআই। দু’জনেই সকালে সিবিআই দফতরে হাজির হন।
সিবিআই সূত্রের খবর, মদন মিত্রের সঙ্গে সারদার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা প্রশান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য মিলেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তবে জেরা থেকে বেরোনোর পর প্রশান্ত কিছু বলতে চাননি। বাদলবাবুকে ঘণ্টা তিনেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দফতর থেকে বেরিয়ে বাদলবাবু বলেন, “আমার ছেলে সারদা কনস্ট্রাকশনে সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার ছিল। সে ব্যাপারেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।”
তবে গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বাদলবাবুর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কর্তা নিতুর পরিচয় এবং ছেলের অ্যাকাউন্ট থেকে বাদলবাবুর অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা লেনদেন হয়েছিল কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। মধ্য কলকাতার কোনও পুজোয় সারদার মোটা টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল কি না, সেটাও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। অসমে সারদার মিডিয়া ব্যবসা নিয়ে এ দিন বিকেল ৩টে থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা জেরা করা হয় উত্তর-পূর্বের ব্যবসায়ী রাজেশ বজাজকেও। এই নিয়ে টানা ন’বার সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হলেন রাজেশ। তবে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
সমান্তরাল তদন্তে ইডি এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে। তিনি সারদাকে একটি সিমেন্ট কারখানা বিক্রি করেছিলেন। এ দিন ইডি দফতরে হাজির হন বস্ত্রমন্ত্রীর আইনজীবী জয়দেব দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy