প্রতীকী ছবি।
তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ উপদেষ্টা স্তরের লোক, কেউ কেউ বা সরকারি অফিসার। এবং সকলেই শিক্ষিত, দুর্নীতির ছক কষার কূটবুদ্ধি ধরেন। এমনই কিছু অভিজ্ঞ, পারদর্শী এবং পরিপক্ব মস্তিষ্কের অসাধু অফিসার মিলে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি সংঘটিত করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই দুর্নীতির মামলায় আদালতে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআই ইঙ্গিত দিয়েছে, সুপরিকল্পিত ভাবে, নিপুণ কৌশলে দুর্নীতির জন্য যে উর্বর মস্তিষ্ক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে, এই ঘটনার পরতে পরতে তার প্রমাণ মিলেছে।
সম্প্রতি এসএসসি-র মাধ্যমে স্কুলে ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় ওই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে আদালতে। সিবিআই সূত্রের খবর, চার্জশিটে পক্ব মস্তিষ্কের চক্রান্তনিপুণ কয়েক জন অসাধু সরকারি অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সিবিআইয়ের খবর, এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতি চলাকালীন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক সহযোগী সরকারি অফিসারের ভূমিকার কথা বার বার এসেছে চার্জশিটে। কমিশন ও পার্থের মধ্যে ওই অফিসারই ছিলেন সেতু। তদন্তকারীদের দাবি, দুর্নীতির পুরো বিষয়ে শিক্ষা দফতরের শীর্ষ অফিসার থেকে শুরু করে নিচু তলার কর্মীরা অবগত ছিলেন। তাঁদের অনেকেই প্রভাবশালীদের চাপে কাঠপুতুলের মতো দুর্নীতি চক্রে শামিল হয়েছিলেন বলেও তদন্তে জানা গিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ৩০ সেপ্টেম্বর পেশ করা চার্জশিটে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দুর্নীতি কখনও অযোগ্য, অকর্মণ্যদের দিয়ে হয় না। তার জন্য চাই পাকা মাথা। সত্তর ছুঁইছুঁই কয়েক জন বৃদ্ধ মিলে সরকারি স্কুলের চাকরির নিয়োগপত্র যখন নিপুণ কৌশলে অযোগ্য, অকৃতকার্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের সঙ্গে সঙ্গত করেছিলেন ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন কিছু সরকারি কর্তা। তাঁদের মধ্যে সচিব পর্যায়ের অফিসারের নামও চার্জশিটে রাখা হয়েছে বলে ওই সূত্রের খবর।
সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৪ সালে পার্থ শিল্প দফতর থেকে শিক্ষা দফতরে বদলি হওয়ার পরে তাঁর পক্ব মস্তিষ্কের তত্ত্বাবধানেই ২০১৬-য় সরকারি স্কুলে অশিক্ষক করণিকের মতো তৃতীয় শ্রেণির কর্মী এবং পিয়ন, মেট্রনের মতো ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। তখন এসএসসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আদালতে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, লিখিত পরীক্ষার উত্তর ওএমআর শিটে দিতে হবে। ওই শিট পরীক্ষা করা হবে কম্পিউটারে। সুতরাং কোনও রিভিউ করার সুযোগ থাকবে না। প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল যে, শূন্য পদের সংখ্যা ২০১৭।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর ২০৩৫ জন প্রার্থীর ‘প্যানেল’ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কোনও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়নি। নিজেদের ওয়েবসাইটেও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেনি কমিশন। রিজিয়নাল স্কুল সার্ভিস সেন্টারগুলিও কোনও তালিকা পায়নি। শুধু বলা হয়েছিল, রোল নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইটে গেলেই বোঝা যাবে, প্রার্থী সফল হয়েছেন কি না। সিবিআইয়ের দাবি, এ ভাবে প্রথম দিকে কিছু যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে সুপরিকল্পিত ভাবে ভুয়ো নিয়োগের রাস্তা তৈরি করে রাখা হচ্ছিল। দুর্নীতির সেই জন্মলগ্নেই শান্তিপ্রসাদ সিংহকে এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান করেন পার্থ। তার পরেই আসল খেলা শুরু হয়ে যায় বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ওএমআর শিট রিভিউ করা হবে না। কিন্তু ওএমআর শিট রিভিউয়ের নামে আরটিআই আবেদন নিতে শুরু করে কমিশন। সিবিআইয়ের দাবি, শান্তিপ্রসাদের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ থাকা বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থী আবেদন জমা দিতে আসতেন। সেই সব আবেদনের ভিত্তিতে ওএমআর শিট রিভিউ করে ৩৮১ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম প্যানেলে ঢোকানো হয়। তার মধ্যে সরাসরি পার্থের সুপারিশ করা কিছু নামও ছিল বলে সিবিআইয়ের দাবি।
এখানেই শেষ নয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, এর পরে ‘রিজিয়নাল সার্ভিস কমিশন’-এর চেয়ারম্যানদের কার্যত অন্ধকারে রেখে তাঁদের আসল সই স্ক্যান করে নিয়োগের জন্য সুপারিশপত্র তৈরি করা হয়। সেই সব জাল নিয়োগপত্র তৈরি করে পাঠানো হয় স্কুলশিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। কল্যাণময়ের মাধ্যমে অযোগ্য ৩৮১ জন প্রার্থী চাকরি পান।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০২১ সালে স্কুলশিক্ষা বোর্ডের অ্যাড-হক কমিটির প্রেসিডেন্ট হিসাবে কল্যাণময়ের বয়স হয়ে গিয়েছিল ৬৮। অভিযোগ, পার্থের নির্দেশে নিয়ম ভেঙে তার পরেও কল্যাণময়ের চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, সংঘটিত অপরাধের দল ভাঙতে চাননি পার্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy