আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত থেকে সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলকে। ছবি: পাপন চৌধুরী
দুর্গাপুজো তাঁকে জেলেই কাটাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, কালীভক্ত বলে ঘনিষ্ঠমহলে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডলের দীপাবলিও কাটতে চলেছে সংশোধনাগারে।
বুধবার আসানসোলের বিশেষ আদালতে সিবিআই দাবি করে, অনুব্রতকে এখনও হেফাজতে রাখা জরুরি। তাদের যুক্তি ছিল, গরু পাচারের টাকা লেনদেন হয়েছে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এবং সে প্রক্রিয়ায় যোগ রয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। যদিও অনুব্রতের তরফে বলা হয়, তাঁর বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী অবশ্য তাঁকে ফের জেল হেফাজতে পাঠিয়ে ২৯ অক্টোবর এই আদালতে তোলার নির্দেশ দেন। মাঝে এই আদালতে পুজোর ছুটি থাকায়, অনুব্রতকে দু’দফায় সিজেএম আদালতে তোলা হবে বলে আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। অনুব্রতের মতো প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জেল হেফাজতে আছেন। সূত্রের খবর, এ দিন সিবিআই-এর তদন্তকারীদের কাছে জানতে চান, পার্থ কেমন আছেন।
দু’দফায় মোট ২৮ দিনের মেয়াদ শেষে, এ দিন অনুব্রত ওরফে কেষ্টকে সিবিআই আদালতে তোলা হয়। সিবিআই-এর আইনজীবীরা ফের তাঁর জেল হেফাজতের আর্জি জানান। অভিযুক্তের আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় ও অনির্বাণ গুহঠাকুরতা অবশ্য দাবি করেন, গরু পাচারের সঙ্গে অনুব্রতের যোগ নেই। মামলায় সিবিআই-এর জমা দেওয়া চার্জশিটে নাম থাকা সাত জন জামিন পেয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে অনুব্রতের জেল হেফাজত চাইছে সিবিআই। এ ছাড়া, অনুব্রতের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। বাড়িতে পুজোর আয়োজন, বছর পঁয়ষট্টির অনুব্রতের জেলে পুষ্টিহীন খাবারে সমস্যা, খারাপ শৌচাগার— এমন নানা কারণে জামিনের আর্জি জানানো হয়।
সিবিআই-এর আইনজীবী রাকেশ কুমার পাল্টা দাবি করেন, সিবিআই আদালতে যে তথ্য জমা দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই জেল হেফাজত চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, গত কিছু দিন ধরে বীরভূমের বোলপুরে ধারাবাহিক তদন্ত চালিয়ে গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের নানা যোগাযোগ সামনে এসেছে। রাকেশ আদালতে দাবি করেন, ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে অন্তত একশো বার টাকা লেনদেন হয়েছে। ওই টাকা গরু পাচার থেকেই এসেছে বলে দাবি। গোটা প্রক্রিয়াটির সঙ্গে অনুব্রতের যোগ মিলেছে বলেও দাবি করা হয়।
ঘণ্টাখানেক সওয়াল-জবাবের পরে ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়ে বিচারক এজলাস ছাড়েন। তার পরে আরও প্রায় আধ ঘণ্টা এজলাসেই বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায় অনুব্রতকে। আইনজীবী-সহ কয়েক জনের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায়। আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এজলাস থেকে বেরোনোর মুখে সিবিআই-এর এক আধিকারিককে ডেকে কথা বলেন অনুব্রত। তখনই জানতে চান, পার্থ কেমন আছেন। বীরভূমের মুলুকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে গিয়ে সিবিআই আধিকারিকেরা লস্যি খেয়েছেন কি না, তা-ও অনুব্রত জানতে চান বলে দাবি। অনুব্রত সঙ্ঘের একটি জমি বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে হাতিয়ে নিয়েছিলেন— এই মর্মে অভিযোগ পেয়েছে সিবিআই। মঙ্গলবার বিকেলে মুলুকে সঙ্ঘে গিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সে সূত্রেই অনুব্রতের এমন জিজ্ঞাসা, ধারণা সিবিআই কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy