গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
২০১৪ সালে হওয়া রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-য় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)। বার বার প্রশ্ন উঠেছে, ওই ওএমআর কোথায় উধাও হয়ে গেল? ওএমআর উদ্ধারের জন্য সম্প্রতি অন্য একটি সংস্থাকে নিয়োগ করতে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। যদিও সিবিআইয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, ওই ওএমআরের আসল তথ্য আর নেই। নিম্ন আদালতে জমা দেওয়া সিবিআইয়ের নথিতে টেটের ওএমআর কী ভাবে উধাও হয়েছে তা জানানো হয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি। সিবিআইয়ের সূত্র এ-ও দাবি করেছে, যে সার্ভারে ওএমআরের নথি রাখা হয়, তা ২০১৭ সালে বদলে ফেলা হয়। কেন, তার কারণও জানানো হয়েছে। ওই সূত্র বলছে, যে হার্ড ডিস্কে তথ্য ছিল, সেটা ২০১৭-১৮ সালে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
বার বার প্রশ্ন উঠেছে, ওএমআর স্ক্যান করে যে সার্ভারে রাখা হয়েছিল, তা গেল কোথায়? সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সার্ভারে ওএমআরের নথি রাখা হয়, তা ২০১৭ সালে বদলে ফেলা হয়। দাবি করা হয়, সার্ভার ‘ক্র্যাশ’ করেছিল। সিবিআই এই টেট দুর্নীতিকাণ্ডে যাঁদের জেরা করেছে, তাঁরা এই সার্ভার ‘ক্র্যাশ’ করার দাবি করেছেন দাবি। যে হার্ড ডিস্কে তথ্য ছিল, সেটাকেও ২০১৭-১৮ সালে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার গৌতম মাজি ওই হার্ড ডিস্ক ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ। সেই কারণে নষ্ট করা হয় বলে নথিতে দাবি করেছে সিবিআই। গৌতম প্রয়াত হয়েছেন। সিবিআই সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, টেক্সট ফাইল হিসাবে ওএমআরের যে নথি রেখে দেওয়া হয়েছিল, তা সময়ে সময়ে বদলে দেওয়া হয়। এ ভাবেই ২০১৪ সালের টেটের আসল তথ্য ‘বিকৃত’ বা ‘নষ্ট’ করা হয়েছে বলে সিবিআইয়ের ওই সূত্রের দাবি।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে হওয়া টেটের আসল ওএমআর শিট ওজন দরে বিক্রি করা হয়েছে। ওড়িশায় ‘পেপার পাল্প’ অর্থাৎ মণ্ড তৈরি করে তা নষ্ট করা হয়েছে। ওজন দরে বিক্রি করার আগে সেই ওএমআরের প্রতিলিপি কম্পিউটারে (সফ্ট কপি) তুলে রাখা হয়েছিল। কী ভাবে, তা-ও বিশদে নথিতে জানানো হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে ওএমআরের স্ক্যান করা হয়। ‘এডিএফ স্ক্যান’ করে সেই ওএমআরের ‘পিডিএফ ফাইল’ তৈরি করা হয়। ওই পিডিএফ ফাইল আর ‘এডিট’ করা যায় না। অর্থাৎ তাকে বদলানো যায় না কোনও ভাবেই। তার পরে ওএমআরের আরও একটি স্ক্যান হয়। সেকনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ফাইল তৈরি হয়। সেকনিক এসআর ৬৫০০ এবং সেকোনিক এসআর ৩৫০০ যন্ত্রের মাধ্যমে ইনফ্রা পদ্ধতিতে স্ক্যান করা করে ওএমআরকে ‘টেক্সট ফাইল’ হিসাবে রাখা হয়। এই ‘ডট টেক্সট’ ফাইল এডিট করা যায়। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সময়ে সময়ে ওই নথিই বদলানো হয়েছিল।
টেটের ওএমআরের স্ক্যান করার দায়িত্ব ছিল এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির হাতে। সিবিআইয়ের দাবি, ওএমআরের স্ক্যানিং হয়েছিল ধৃত কৌশিক মাজির নজরদারিতে। তিনি ওই সংস্থার অংশীদার। ওএমআরের সমস্ত ডেটা ছিল ওই সংস্থার হাতে। সিবিআইয়ের আরও দাবি, এই সংক্রান্ত কোনও নথি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে দেওয়া হয়নি। ওই সংস্থা আসল ওএমআর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে পাঠায়নি। নিয়ম না-মেনে নথিগুলো তারা গুদামে রেখে দেয়। পরে ওজন দরে বিক্রি করা হয়।
গত শুক্রবার হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই ওএমআরের তথ্য উদ্ধারের জন্য অন্য সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে বলে। বিচারপতি মান্থার নির্দেশ, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই সার্ভারের মূল তথ্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বার তারা অন্য সংস্থা নিয়োগ করুক। প্রয়োজনে দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির সংস্থাগুলির সাহায্য নিক সিবিআই। সেগুলি উইপ্রো কিংবা টিসিএস-এর মতো সংস্থাও হতে পারে বলে জানান বিচারপতি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় ওএমআর শিটের তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা উদ্ধার করা জরুরি। যদিও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, টেটের সেই আসল নথি নষ্ট করা হয়েছে। যা রয়েছে, তা সময়ে সময়ে বদল করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy