২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় এক নম্বর নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনল সিবিআই। তাদের দাবি, এক নম্বর নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বঞ্চিত করা হয়েছে অন্তত ১৫৮ জন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে। নিয়োগ মামলার চার্জশিটে এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা চার্জশিট আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে এক নম্বর দেওয়া নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা। সিবিআই জানিয়েছে, ২০১৪ সালের টেট অনুযায়ী ২০১৭ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন অনেক পরীক্ষার্থী বাংলা মাধ্যমের প্রশ্নপত্রে একটি প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি তোলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ওই প্রশ্নের জন্য যে বিকল্প উত্তরগুলি দেওয়া রয়েছে, তার মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিকল্প— উভয়ই সঠিক। যে কোনও একটি বিকল্প বেছে নিলেই এ ক্ষেত্রে নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, কেবল দ্বিতীয় বিকল্পের ক্ষেত্রেই এক নম্বর দেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রথম বিকল্প বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের এক নম্বর দেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন নিয়ে এই বিতর্কের আবহে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রথম বিকল্পের ক্ষেত্রেও এক নম্বর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ ক্ষেত্রে চারটি শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রথমত, যাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দ্বিতীয়ত, যাঁরা কেবল এক নম্বরের জন্য পাশ করতে পারেননি, তৃতীয়ত, যাঁরা বাংলা মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন এবং চতুর্থত, যাঁরা ওই বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তর হিসাবে প্রথম বিকল্পটি বেছে নিয়েছেন, তাঁদেরই বাড়তি এক নম্বর করে দেওয়া হবে বলে জানায় পর্ষদ।
সিবিআই জানিয়েছে, পর্ষদের স্থির করা এই চার শর্তে বাড়তি এক নম্বর পাওয়ার উপযোগী ছিলেন ৪২৮ জন প্রার্থী। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাত্র ২৭০ জনের প্যানেল প্রকাশ করে পর্ষদ। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে চাকরি পান ২৬৪ জন। এ ভাবে ১৫৮ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বাছাই করে এই ২৭০ জনের তালিকা প্রস্তুত করেছে পর্ষদ। তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে ৪৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তই নন! এ ছাড়া, ন’জন এমন রয়েছেন, যাঁরা বাড়তি এক নম্বর পাওয়ার পরেও পাশ করেননি, অথচ প্যানেলে তাঁদের নাম রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, উর্দু মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন, এমন দু’জনকেও সুযোগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এক জন আবার দ্বিতীয় বিকল্প সঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার পরেও বাড়তি এক নম্বর পান। কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযোগ, এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছেন পার্থ এবং মানিক।
২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর পর্ষদের আধিকারিকেরা তৎকালীন সভাপতি মানিকের নেতৃত্বে একটি বৈঠক করেন এবং সেখানেই বাড়তি এক নম্বর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সিবিআই জানিয়েছে, মানিকের দফতর থেকে সেই কাগজপত্র পাঠানো হয় শিক্ষা দফতরের কাছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অভিমতও চাওয়া হয়েছিল। ২২ নভেম্বর মানিকের সেই সিদ্ধান্তে সবুজ সঙ্কেত দেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। তার কয়েক দিনের মধ্যেই ৩০ নভেম্বর পর্ষদ ২৭০ জনের তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে প্রার্থীদের নাম, রোল নম্বর বা বাবার নাম জাতীয় কোনও তথ্য ছিল না। সিবিআইয়ের দাবি, কারচুপি এড়াতে ইচ্ছাকৃত ভাবে এই তথ্যগুলি প্যানেলে গোপন রাখা হয়েছিল। পর্ষদ জানিয়ে দেয়, এই প্রার্থীদের কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। ওই বছরেরই ৪ ডিসেম্বর পর্ষদের তৎকালীন সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচি ২৭০ জনের নিয়োগপত্রের জন্য জেলায় জেলায় সুপারিশও পাঠিয়ে দেন।
চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, ২৬৪ জনের নিয়োগ বেআইনি ভাবে হয়েছে। বাড়তি এক নম্বর নিয়ে পার্থ এবং মানিকের ষড়যন্ত্রে ফলেই চাকরি পেয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy