Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
Primary Recruitment Scam CBI

‘একে নিতেই হবে’, পার্থই লিখে দিতেন অযোগ্যদের তালিকায়! নিয়োগ মামলার চার্জশিটে দাবি সিবিআইয়ের

গত বছরের অক্টোবরে প্রাথমিক মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ১৯ পাতার একটি চার্জশিট সম্প্রতি তারা আদালতে জমা দিয়েছে। তার ছত্রে ছত্রে রয়েছে পার্থ এবং মানিক ভট্টাচার্যের নাম।

বিকাশ ভবনের তল্লাশিতে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা উদ্ধার হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সে সব নাম সুপারিশ করেছিলেন বলে জানিয়েছে সিবিআই।

বিকাশ ভবনের তল্লাশিতে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা উদ্ধার হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সে সব নাম সুপারিশ করেছিলেন বলে জানিয়েছে সিবিআই। —ফাইল চিত্র।

সারমিন বেগম
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৪
Share: Save:

‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকার উপর বিভিন্ন নির্দেশমূলক মন্তব্য নিজে লিখে দিতেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনই দাবি করেছে সিবিআই। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় সংস্থা যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা চার্জশিট আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেই পার্থের হাতের লেখার উল্লেখ রয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, বিকাশ ভবনে তল্লাশি চালিয়ে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের নামের তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানেই পার্থের হাতের লেখা ছিল বলে জানা গিয়েছে। যদিও সেই লেখা সিবিআই বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে পার্থের ‘হাতে লেখা’ নির্দেশের ‘অনুলিখন’।

২০২৩ সালের জুন মাসে প্রাথমিক মামলার তদন্তে বিকাশ ভবনে হানা দেয় সিবিআই। সেখানকার গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয় চাকরিপ্রার্থীদের নামের একটি তালিকা। ১৯ পাতার চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, ওই তালিকায় ৩২৪ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর নাম ছিল। পরে তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, আসলে সেখানে প্রার্থীসংখ্যা ৩২১। এঁদের প্রত্যেকের নাম প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালী কোনও না কোনও ব্যক্তি সুপারিশ করেছিলেন। তালিকায় প্রার্থীদের নাম এবং রোল নম্বরের পাশাপাশি সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা ছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাতেই লেখা থাকত ‘একে নিতেই হবে’, ‘এটা খুব দরকারি’ ইত্যাদি টুকরো টুকরো মন্তব্য। সিবিআইয়ের দাবি, পার্থ নিজের হাতেই ওই সব মন্তব্য লিখতেন।

চার্জশিটের ১৫ নম্বর পাতায় (তার প্রতিলিপি আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে রয়েছে) সিবিআই জানিয়েছে, স্বয়ং পার্থের কাছ থেকে এই ৩২১ জন প্রার্থীর সুপারিশ এসে পৌঁছেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। পার্থের সুপারিশ নিয়ে নামের তালিকার ‘হার্ড কপি’ এবং সিডি গিয়েছিল বিকাশ ভবনে। পার্থের ওএসডি প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ওই তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল।

সিবিআই জানিয়েছে, এক এক জন প্রার্থীর নামের ক্ষেত্রে এক এক রকম মন্তব্য লিখে দিতেন পার্থ। কোনও নামের উপরে লিখতেন ‘একে নিতেই হবে’ (মাস্ট বি টেক্‌ন), কোনও নামের উপরে লিখতেন ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে নিতে হবে’ (ওনলি ট্রেন্‌ড টু বি টেকেন)। প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জেলার নামও উল্লেখ করে দিতেন তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ। কোথাও লিখতেন ‘পুরুলিয়া’, কোথাও ‘বাঁকুড়া’। কোনও কোনও প্রার্থীর নামের পাশে আবার ‘ভিভিআই’ (পুরো কথা ‘ভেরি ভেরি ইমপর্টেন্ট’ বা ‘খুব খুব দরকারি’) লিখে দেওয়া হত!

বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষা দফতরের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে ছিলেন সুপর্ণা নিয়োগী নামের এক মহিলা। সিবিআই জানিয়েছে, পার্থের হাতের লেখা থেকে তিনিই সে সব মন্তব্য অন্য একটি কাগজে নকল করতেন। সিডির সঙ্গে সেই অনুলিখন পাঠিয়ে দেওয়া হত নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। সে সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে ছিলেন মানিক। সুপারিশের ওই ৩২১ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ১৩৪ জন ২০১৪ সালের টেটের মাধ্যমে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছে সিবিআই। তবে পার্থের হাতে লেখা মন্তব্যের কাগজ উদ্ধার করা যায়নি। অনুলিখনের পরেই তা আবার পার্থের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হত বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। প্রবীর, সুপর্ণা-সহ একাধিক সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই এই তথ্য জানতে পেরেছে। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে সুপর্ণা বলেন, ‘‘আমরা চার জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ছিলাম। আমাদের সিবিআই ডেকেছিল এবং কিছু কাগজ দেখিয়েছিল। তাতে ‘বাঁকুড়া’, ‘পুরুলিয়া’ ইত্যাদি জেলার কথা লেখা ছিল। মন্ত্রীর হাতের লেখা তাতে থাকত কি না, মনে নেই। স্যর ওগুলো আমাদের লিখে দিতে বলতেন, তাই লিখে দিতাম। স্যরের নির্দেশে কাজ করতে হয়েছে। কিসের তালিকা, তার ভিতরে কী আছে, সে সব আমরা জানতাম না।’’

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে প্রাথমিক মামলায় গত বছরের অক্টোবরে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এই মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থা যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তার ছত্রে ছত্রে রয়েছে পার্থ এবং মানিকের নাম। অভিযোগ, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিতেন পার্থ-মানিকেরা। সেই তদন্তের সূত্রেই পার্থের হাতের লেখার কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Primary Recruitment Case CBI Partha Chatterjee Recruitment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy