Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগ বন্ধ, দুর্ভোগে রোগীরা

মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও ছেদ ফেলা যাবে না। রোগী প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধেও মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও ছেদ ফেলা যাবে না।

রোগী প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধেও মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তা সত্ত্বেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতাল গত দু’সপ্তাহ ধরে কার্ডিওথোরাসিকের (সিটিভিএস) মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছে।

মেডিক্যাল-কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, কার্ডিওথোরাসিক ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ছাদ-দেওয়াল ঝুরঝুরে হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে সংস্কার দরকার। না হলে যে কোনও দিন ওয়ার্ডে বা ওটি-র ভিতরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

তাই আপাতত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত (প্রয়োজনে সময়সীমা আরও বাড়তে পারে) মেডিক্যালে ওপেন হার্ট সার্জারি, করোনারি আর্টারি বাইপাসের মতো কোনও অস্ত্রোপচারই হবে না। আইটিইউ বন্ধ। এমনকী, কার্ডিওথোরাসিকের ৩৬ শয্যার ওয়ার্ডে যে সব রোগী অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় ভর্তি ছিলেন, তাঁদেরও সকলকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৫ জানুয়ারির পরে যোগাযোগ করতে।

মেডিক্যালে শুধু কার্ডিওথোরাসিকের আউটডোর হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও যদি এমন রোগী পাওয়া যায়, যাঁদের ভর্তি করা দরকার এবং অস্ত্রোপচার দরকার, তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বিভাগ বন্ধ। তাই রোগী যেন অন্য হাসপাতালে গিয়ে ভর্তির চেষ্টা করেন।

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মেডিক্যালের এই সিদ্ধান্তে বিরক্ত এবং স্তম্ভিত। তাঁদের যুক্তি, ভবন সংস্কারের জন্য অস্ত্রোপচার কিছু দিনের জন্য বন্ধ থাকতে পারে, এত দিনের জন্য নয়।

দ্বিতীয়ত, অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকলেও ওয়ার্ড কেন বন্ধ থাকবে? মেডিক্যাল কলেজের মতো প্রথম সারির হাসপাতালে কিছু দিনের জন্য ৩৬টি শয্যা স্থানান্তরিত করার বিকল্প জায়গা কেন থাকবে না? কেনই বা চিকিৎসকের এই আকালে কার্ডিওথোরাসিকের চিকিৎসকেরা এত দিন কর্মশূন্য হয়ে থাকবেন?

তা ছাড়া, মেডিক্যালের এই সিদ্ধান্তে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগ। কারণ, মেডিক্যাল থেকে প্রত্যাখ্যাত রোগীদের ৮০ শতাংশই এসএসকেএমে গিয়ে ভর্তির জন্য হত্যে দিচ্ছেন। সেখানকার বিভাগীয় প্রধান শুভঙ্কর ভট্টাচার্য স্বাস্থ্যভবনে লিখিত ভাবে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্লাবন মুখোপাধ্যায়-রা (মেডিক্যালের কার্ডিওথোরাসিকের প্রধান) হুট করে ওঁদের বিভাগ এত দিনের জন্য বন্ধ করে দিলেন। প্রতিদিন মেডিক্যাল থেকে ভূরি ভূরি রোগী এখানে চলে আসছেন। আমাদের শোচনীয় অবস্থা। এই ভাবে চললে এ বার আমাদের বিভাগও বন্ধ করতে হবে।’’

শুভঙ্করবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের এমনিতেই লোকাভাব। বিভাগে কোনও অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর বা কোনও আরএমও নেই। ১৮ জন পিজিটি-র জায়গায় রয়েছেন মাত্র চার জন। এর মধ্যেই তাঁদের বাইপাস, ওপেন হার্ট ও অন্যান্য অস্ত্রোপচার মিলিয়ে মাসে ১৫০-১৬০টি অস্ত্রোপচার করতে হয়। তার উপরে ডায়ালিসিসের চ্যানেল করা, আউটডোর করাও রয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘এর উপরে মেডিক্যাল নিজেদের ঘাড় থেকে রোগী ঝেড়ে ফেলে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে, এটা তো হতে পারে না। এই চাপ কেন নেব?’’ মেডিক্যালের কার্ডিওথোরাসিকের প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ভবন সংস্কারকেই তাঁরা এখন অগ্রাধিকার দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু লোক সবেতেই খুঁত ধরবেন। ওটি বা ওয়ার্ডের দেওয়াল ভেঙে রোগীর বিপদ হলে তাঁরাই প্রথম আমাদের তুলোধনা করবেন।’’

অস্ত্রোপচার না হয় স্থগিত থাকল, কিন্তু রোগী ভর্তি বন্ধ হল কেন? সেটা তো মেডিক্যালের অন্য কোনও জায়গায় কিছু দিনের জন্য অস্থায়ী ভাবে করাই যেত।

প্লাবনবাবু ও মেডিক্যালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনেরই উত্তর, ‘‘অতটা জায়গা বার করা মুশকিল। তা ছাড়া, যদি পাওয়াও যায়, তা হলে সেখানে বারবার গিয়ে রোগী দেখে আসা অসুবিধাজনক। ইমার্জেন্সি হলে রোগীকে তৎক্ষণাৎ পরিষেবা দেওয়াও মুশকিল। ঝুঁকি থেকে যাবে। তাই তা করা হয়নি।’’ যা শুনে এসএসকেএমের সিটিভিএসের কিছু চিকিৎসকের কটাক্ষ, ‘‘বেছে বেছে বছর শেষের ছুটির মরসুমেই এটা করেছে মেডিক্যালের সিটিভিএস বিভাগ।’’ একে অবশ্য ‘পাগলের প্রলাপ’ বলছেন মেডিক্যালের সিটিভিএসের ডাক্তারবাবুরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Medical College Cardiovascular Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE