রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ফাইল চিত্র।
পুরভোটে কোভিড বিধি লঙ্ঘিত হলে সভা বাতিল, জরিমানার মতো শাস্তির ব্যবস্থা থাকছে। কিন্তু প্রার্থী-পদ বাতিলের মতো কঠোর ব্যবস্থার পথে হাঁটতে নারাজ রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কেন? কেননা জাতীয় নির্বাচন কমিশন বা রাজ্য কমিশন, কোনও সংস্থাতেই নাকি তেমন রীতি-রেওয়াজ নেই।
ফলে চারটি পুর নিগমের আসন্ন ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোভিড বিধি স্থির করে দেওয়া সত্ত্বেও তাতে কাজের কাজ কতটা হবে, চিকিৎসক শিবির সেই বিষয়ে সন্দিহান। জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিধানসভা ভোটে কোভিডের সুরক্ষা বিধি স্থির করে দেওয়া সত্ত্বেও তা পুরোপুরি মানা হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ-সহ অনেকেরই অভিযোগ। এবং সেই অমান্যতার প্রতিফলন ছিল ভোট-পরবর্তী সংক্রমণের রেখচিত্রেও। আসন্ন পুরভোটের মনোনয়ন পেশের শেষ দিন, সোমবার ‘বিধিলঙ্ঘন’-এর যে-ছবি দেখা গিয়েছে, সেটা ভোটের প্রচারেও দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন অনেক চিকিৎসক। তাঁদের বক্তব্য, বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না-করলে চলতেই থাকবে এই প্রবণতা। রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুধু জানিয়েছে, কোভিড বিধি ভাঙলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে অতিমারি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
কেমন পদক্ষেপ? তেমন হলে কি প্রার্থী-পদ বাতিল হতে পারে? কমিশন জানিয়েছে, প্রার্থী-পদ বাতিলের মতো ‘কড়া’ পদক্ষেপের রীতি নেই। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কলকাতার পুরভোটে বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের উদাহরণ নেই। তাই আশঙ্কা, কমিশন তাদের মতো নিয়ম করলেও কার্যত তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলবে ভোটের প্রচার। মানা হবে না নিয়মনীতি।
২২ জানুয়ারি আসানসোল, বিধাননগর, চন্দননগর ও শিলিগুড়ি পুর নিগমের ভোট হবে নির্ধারিত সূচি মেনেই। ৩০ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলির কাছে নির্দেশিকার আকারে কোভিড বিধি পাঠিয়ে দিয়েছে কমিশন। তাতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বিধি মেনে রাজনৈতিক প্রচারের উপরে। স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, নির্ধারিত কোভিড বিধি লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অতিমারি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। বাতিল হবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পরবর্তী প্রচারের অনুমোদন। আগে থেকে অনুমতি নেওয়া থাকলেও তা বাতিল করে দেওয়া হবে পত্রপাঠ। এই মর্মে জেলা প্রশাসনগুলিকেও দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানাচ্ছে, অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী জরিমানাও করা হতে পারে।
এক কমিশন-কর্তা বলেন, ‘‘৩০ ডিসেম্বরের পরে সোমবারেও এক দফা বিধিনিষেধ প্রকাশিত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অতিমারি আইন অনুযায়ী যা করণীয়, সেটাই করা হবে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনও বিধানসভা ভোটের সময় এই পথে হেঁটেছিল। তখনও প্রার্থী-পদ বাতিলের মতো কঠোরতম পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ বস্তুত, গত বিধানসভা ভোটে জাতীয় নির্বাচন কমিশন যে-বিধি স্থির করেছিল, কার্যত সেটিই অনুসরণ করছে রাজ্য কমিশন। সেই বিধি অনুসারে ভোট হয়েছে কলকাতা পুর নিগমেও। রাজনৈতিক ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, বিধিতে যে-পদক্ষেপের সুযোগ আছে, তা কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হলে বিধির মান্যতা পেতে সমস্যা হবে না।
সোমবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানায়, খোলা ও বড় মাঠে সর্বাধিক ৫০০ জনকে নিয়ে প্রচারসভা করা যাবে। জেলা প্রশাসনগুলিকে কমিশন জানিয়েছে, প্রবেশ-প্রস্থানের পৃথক পথ আছে, এমন বড় মাঠ চিহ্নিত করে রাখতে হবে আগে থেকে। একমাত্র সেখানেই এই ধরনের সভা করা যাবে। প্রতিটি ইচ্ছুক দল যাতে সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে জেলা প্রশাসনকেই। রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্ব, নির্দিষ্ট সংখ্যার থেকে বেশি লোক না-ডাকা, শরীরের তাপমাত্রা মাপা, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা রাখা। সেই সঙ্গে সভায় আসা প্রত্যেকের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা।
কমিশনের সূত্র জানাচ্ছে, এই পুরো বিষয়টি খেয়াল রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির ভোট আধিকারিক, পর্যবেক্ষকদের। বিধি যাতে যথাযথ ভাবে পালিত হয়, তা নিশ্চিত করবে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। কোথাও বিধি অমান্যের কোনও অভিযোগ উঠলে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।
বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গ প্রশাসন কার্যত দায়ী করেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে। এখন কোভিড (বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃতীয় তরঙ্গ) সংক্রমণ ফের লাফিয়ে বাড়ছে। তার মধ্যে চারটি পুর নিগমে ভোট নিয়ে বাড়তি চাপ থাকবে কমিশন এবং প্রশাসনের উপরেও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, প্রশাসনকেই এমন পদক্ষেপ করতে হবে, যাতে বিধানসভা ভোটের পরে ওঠা অভিযোগের পুনরাবৃত্তি না-হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy