অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
বাংলার কংগ্রেসে সাংগঠনিক পালাবদল ঘিরে জলঘোলা শুরু হতেই তাতে মাছ ধরতে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি! দু’দলের মধ্যে থেকেই ‘প্রাক্তন’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উদ্দেশে আহ্বান জানানো হল তাদের শিবিরে যোগ দেওয়ার। তবে তৃণমূলের মধ্যে এই নিয়ে পরস্পর-বিরোধী সুরও শোনা গিয়েছে। কংগ্রেসের তরফে অবশ্য এই ঘটনাপ্রবাহকে সুযোগসন্ধানী রাজনীতি বলে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।
লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের কাছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে তিনি ইস্তফার চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অধীর। তবে সেই ইস্তফা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে তাঁকে কিছু না জানিয়ে দিল্লিতে দলের বৈঠকে যে ভাবে তাঁকে ‘প্রাক্তন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে ক্ষোভ এবং অভিমান প্রকাশ্যে এনেছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ। তার পরেই বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অধীরের উদ্দেশে। রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার (এ) সভাপতি আঠাওয়ালে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনি (অধীর) হেরেছেন বলেই তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং অপমান করা হচ্ছে৷ কংগ্রেসের এই মনোভাবের কারণেই বহু মানুষ দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অধীরজি যদি কংগ্রেসে অপমানিত হন, তা হলে তাঁর কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমি তাঁকে এনডিএ বা আমার দল আরপিআইতে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
রাজনীতিতে অধীরের প্রাক্তন ‘শিষ্য’ এবং কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকারও তাঁর প্রাক্তন ‘গুরু’র উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার উন্নয়নের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার! তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্বের দাবি, অধীর যদি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ‘পরোক্ষে সমর্থনে’র রাস্তা ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের দলে আসেন, তা হলে রাজনীতি ও উন্নয়নের জন্য একত্রে কাজ করা যেতেই পারে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অধীরের ‘অসম্মান বা আঘাত’ তিনি বুঝতে পারছেন বলেও মন্তব্য করেছেন অপূর্ব। কিন্তু যে অধীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূলে এসেছিলেন, যে অধীর নিজে বলছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েই তাঁকে অসম্মানের মুখে পড়তে হয়েছে, সেই তিনি তৃণমূলে এলে কোনও অসুবিধা হবে না? অপূর্বের জবাব, ‘‘রাজনীতিতে চিরস্থায়ী শত্রু বা শেষ কথা বলে কিছু হয় না! অধীর চৌধুরী তো এক সময়ে রাম চট্টোপাধ্যায়ের মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক করেছেন, আরএসপি-র দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট করেছেন। কংগ্রেসে থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছেন, আবার তাদের সঙ্গে জোটও করেছেন। সুতরাং, তিনি চাইলে অসুবিধা কোথায়?’’
একই দিনে তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য অধীরকে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘কেমন জানি না দেখে মনে হচ্ছে, উনি বহিষ্কারের জন্য অপেক্ষা করছেন বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে! বিজেপির সঙ্গে হয়তো কথাবার্তাও বলে রেখেছেন।” কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচীও তাঁর প্রাক্তন নেতাকে নিজের বর্তমান দলে ডাক দিতে ছাড়েননি। অধীর বলেছিলেন, তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’য় শামিল হয়ে কংগ্রেসের উপরে অত্যাচার বন্ধ করেনি, দল ভাঙাও চলছে। সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে চুপ করে গেলে সেই সহকর্মীদের প্রতি অবিচার, অন্যায় করা হবে। সেই প্রসঙ্গ তুলে কৌস্তভের মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস ছাড়ার সময়ে আমার আর আজকের অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছি! চলুন, একসঙ্গে লড়াই করি।’’
প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁরা আগের নিজের দল সামলান! পাঁচ বারের সাংসদ এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যকে তাঁদের পরামর্শ দিতে হবে না।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের পরে দলের সমাজমাধ্যম শাখার চেয়ারপার্সন অশোক ভট্টাচার্যও এআইসিসি-কে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছেন, বাংলার অন্য নেতাদের বক্তব্যও দিল্লি শুনুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy