নারদ-কাণ্ডে ধৃত নেতা-মন্ত্রীদের বন্দিদশা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে নারদ মামলার শুনানি না-হওয়ায় তাঁদের ভাগ্যনির্ধারণ পিছিয়ে গেল আরও ২৪ ঘণ্টা। অভিযুক্ত পক্ষের অন্যতম আইনজীবী অনিন্দ্যকিশোর রাউত জানান, আজ, শুক্রবার ফের শুনানি রয়েছে। বুধবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়েছিল। এ দিন ফের শুনানির কথা ছিল। সকালে হাই কোর্ট প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ‘অনিবার্য’ কারণে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ এজলাসে বসবে না।
হাই কোর্ট প্রশাসন ও আইনজীবী সূত্রের খবর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে এ দিন আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। সন্ধ্যায় হাই কোর্ট প্রশাসন প্রকাশিত শুক্রবারের শুনানি-তালিকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের জন্য বরাদ্দ তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে নারদ মামলা। তবে আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, শুক্রবার সপ্তাহের শেষ কাজের দিন। শুনানি যদি শেষ না-হয়, পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে রাজ্যের দুই মন্ত্রী-সহ চার নেতাকে। তবে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীদের আশা, শুনানি যে-পর্যায়ে রয়েছে তাতে আজ, শুক্রবারই ফয়সালা হতে পারে।
কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, এ দিন বিচারপতি বিন্দলের ডিভিশন বেঞ্চ যদি না-ই বসে, তা হলে অন্য ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি পাঠানো হল না কেন? আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, খোদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিজে মামলাটি শুনছেন। তিনি এক দিন অনিবার্য কারণে মামলা শুনতে পারেননি। যদি তিনি দীর্ঘকালীন ছুটি নিতেন, তা হলে মামলা অবশ্যই অন্য বেঞ্চে স্থানান্তর করা হত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক দিনের জন্য তা করা হয় না। উপরন্তু, নতুন বিচারপতি মামলা শুনলে তাঁকে পুরোদস্তুর সওয়াল-জবাব বিশ্লেষণ করতে হত। সে-ক্ষেত্রে বিচারে আরও দেরি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকত।
১৭ মে দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নারদ মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। সে-দিন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে জামিনও পান তাঁরা। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিবিআই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জামিনের উপরে স্থগিতাদেশ পায়। ফলে রাতেই প্রেসিডেন্সি জেলে যেতে হয় চার জনকে। আপাতত তাঁরা জেল হাজতেই আছেন। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা জানান, সিবিআই হাই কোর্টের মামলার ব্যাপারে তাঁদের কোনও নোটিস পাঠায়নি। ফলে একতরফা সওয়াল শুনে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বুধবার অভিযুক্ত পক্ষের হয়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আইনজীবীরা হাই কোর্টেও এ কথা জানান। নারদ মামলায় এই চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার পরেও কেন জেল হাজতে বন্দি করে রাখার প্রয়োজন হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। যদিও সিবিআইয়ের তরফে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার বক্তব্য ছিল, অভিযুক্তেরা প্রভাবশালী। তাঁর তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন। ওই চার জনকে গ্রেফতারের পরে নিজাম প্যালেস-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। সিবিআইয়ের দফতরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নিম্ন আদালতের উপরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে নারদ মামলার বিচারকে ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আবেদনও করেছে সিবিআই।
রাজ্যের আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, মামলার বিচারস্থল বদল হবে কি না, তা নিয়ে আইনি বিতর্ক থাকতে পারে। সেই আইনি লড়াই যেতে পারে বহু দূর। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে চার জন বয়স্ক মানুষকে জেলবন্দি করে রাখার পিছনে শুধু প্রভাবশালী তত্ত্ব যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে যেখানে চার্জশিট পেশ করা হয়ে গিয়েছে, সেখানে প্রভাবশালী-তত্ত্ব কত দূর যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অন্য একটি সূত্রের খবর, এ দিন বেঞ্চ না-বসায় অভিযুক্তদের তরফে ডিভিশন বেঞ্চ বদলের আর্জি জানানো হয়। কিন্তু আজ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আদালতে বসবেন বলে সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy