কলকাতা হাই কোর্ট শর্তসাপেক্ষে শুভেন্দু অধিকারীকে সন্দেশখালি যাওয়ার অনুমতি দিল। — ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে, সোমবার নির্দেশ বিচারপতি কৌশিক চন্দের। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে শর্তসাপেক্ষে সন্দেশখালি যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সাত দিন পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্দেশখালিতে যত অপরাধের মামলা হয়েছে, সোমবার সেই তথ্য চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। বসিরহাট পুলিশ জেলার এসপিকে ওই তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, বিচারপতি জানিয়েছেন, সন্দেশখালির নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় যেতে পারবেন শুভেন্দু। কোনও প্ররোচনা দেওয়া যাবে না। তিন ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য পুলিশকে নিজের রুট জানাতে হবে শুভেন্দুকে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আপাতত ওই এলাকায় মোতায়েন করার নির্দেশ দিচ্ছি না। কিন্তু নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে ফল ভুগতে হবে রাজ্যকে।’’
আদালতে শুভেন্দুর আবেদনের বিরোধিতা করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তিনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি)-র রিপোর্ট বিচারপতির সামনে তুলে ধরেন। দাবি করেন, শুভেন্দু সন্দেশখালি গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে হতে। আইবির রিপোর্ট প্রকাশ করা যায় না। তাই পুরো রিপোর্ট পড়া হয়নি আদালতে। এর পরেই কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তীর কাছে বিচারপতি চন্দ জানতে চান, তাঁদের কোনও আপত্তি রয়েছে কি না। অশোক জানান, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। কোনও নির্দেশ নেই। এই নিয়ে রাজ্য সওয়াল করে বলে, সারা জীবনে সন্দেশখালি যাননি, শুধুমাত্র ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে বলে সেখানে তাঁকে যেতেই হবে? বিচারপতি এই প্রসঙ্গে রাজ্য প্রশ্ন করেন, ‘‘আদালত আগে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার কী হল ? আদালতের নির্দেশ বিবেচনা করে দেখেছিল প্রশাসন ? যেদিন ১৪৪ ধারা বাতিল করা হল, সে দিনই আবার ১৪৪ ধারা জারি করা হল ! আদালতের নির্দেশের কী গুরুত্ব থাকল ?’’ এর পরেই বিচারপতির মন্তব্য, ১৪৪ ধারা জারি করে কোনও ব্যক্তিকে কোনও এলাকায় প্রবেশ করা থেকে আটকানো যায় না। ১৪৪ ধারার মানে এক সঙ্গে পাঁচ জন ব্যক্তি যাতে একত্রিত হতে না পারে। তার পরেই শর্তসাপেক্ষে শুভেন্দুকে সন্দেশখালিতে যাওয়ার অনুমতি দেয় আদালত।
সোমবার এই রায় শুনে হাই কোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শুভেন্দু। তার পরেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সন্দেশখালির ছয়-সাতটি গ্রামে যাবেন তিনি, যেখানে মহিলারা ‘নির্যাতিত’ হয়েছেন। যে সব জায়গা থেকে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেখানেও যাবেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ কলকাতা থেকে বিধায়কদের প্রতিনিধিদল নিয়ে সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
১৪৪ ধারাকে সামনে রেখে সন্দেশখালিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু। সিপিএমের একটি মামলার প্রেক্ষিতে সন্দেশখালি থেকে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ খারিজের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। তার পর সন্দেশখালির পাঁচ জায়গা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে প্রশাসন। শুভেন্দুর অভিযোগ, তার পরেও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এই অভিযোগ জানিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু। বিচারপতি চন্দ সেই মামলা দায়েরের অনুমতি দেন। তার শুনানিতেই সোমবার বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যে সব এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়েছে, সেখানে যেতে পারেন শুভেন্দু। সন্দেশখালির নির্দিষ্ট কোন জায়গায় যেতে চান বিরোধী দলনেতা, বিকেল ৩টের মধ্যে জানানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। পরের শুনানিতে সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারির উপর স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট।
সন্দেশখালিতে যেতে গিয়ে গত সোমবার বাধার মুখে পড়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে ঢুকতে চেয়ে তার পর প্রথম বার হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার শুভেন্দুর আবেদনের নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। সিপিএমের করা মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারির জন্য নির্দিষ্ট করে উপদ্রুত জায়গা চিহ্নিত করা হয়নি। তাই ১৪৪ ধারা খারিজ করে হাই কোর্ট। আলাদা করে আর শুভেন্দুর আবেদন শোনার দরকার পড়েনি। তার পরেও বাধার মুখে পড়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় আবেদন করেন শুভেন্দু।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে আবার উত্তপ্ত হয় সন্দেশখালি। সামনের সারিতে ছিলেন মহিলারা। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরাদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। মহিলাদের একাংশ অভিযোগ করেন, তাঁরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সেই কারণ দেখিয়ে গত সোমবারে পর গত বৃহস্পতিবারও শুভেন্দুকে সন্দেশখালি যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই মামলা দায়ের। তাতেই হাই কোর্ট সোমবার সেই ১৪৪ ধারা জারির উপর স্থগিতাদেশ দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy