Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Women Right

গণপরিবহণে সিসিটিভি, হেল্পলাইন! মহিলাদের নিরাপত্তায় রাজ্যের অভিমত চায় হাই কোর্ট

বিচারপতি বিন্দল বলেন, ‘‘এটা একটা মানসিকতা। যা ছোট থেকেই পরিবর্তন করা দরকার। গণ পরিবহণের আচরণবিধি শিশুপাঠ্য পুস্তকে থাকলেও ভাল।’’

রাজ্যের গণপরিবহণে মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা করেন রেনু প্রধান নামে এক মহিলা।

রাজ্যের গণপরিবহণে মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা করেন রেনু প্রধান নামে এক মহিলা। ছবি: আনন্দবাজার অনলাইনের আর্কাইভ থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ১৪:৫৯
Share: Save:

গণপরিবহণে মহিলাদের নিরাপত্তায় কোনও সুরক্ষা হেল্পলাইন এবং সিসিটিভি চালু করা যায় কি না, রাজ্যের কাছে তা জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। ১২ অগস্টের মধ্যে আদালতে হলফনামা আকারে তা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

রাজ্যের গণপরিবহণে মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেন রেনু প্রধান নামে এক মহিলা। তাঁর অভিযোগ, গণপরিবহনে প্রায়শই মহিলাদের উপর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। কিন্তু ঘটনা ঘটার সময় প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দোষীকে চিহ্নিত না করতে পারার জন্য পুলিশও কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না। এই সমস্যা মেটানোর জন্য রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি বাস এবং ট্যাক্সিতে সুরক্ষা হেল্পলাইন চালু এবং সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হোক। আবেদনকারিনীর বক্তব্য, সুরক্ষার অভাব বোধ করছেন মহিলারা। শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মহিলাদের তৎক্ষণাৎ সাহায্যের জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।

ওই একই মামলায় অঙ্কন বিশ্বাস নামে এক নাগরিক আবেদন জনান, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও (ট্রান্সজেন্ডার) গণপরিবহণে সুরক্ষিত নন। তাঁর আবেদন, এমন কোনও অ্যাপ আনা হোক, যেখানে চালক-সহ গাড়ির অন্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকবে। যেমনটা হয় ক্যাব পরিষেবায়। সেখানে চালকের পাশাপাশি গাড়ির নম্বর, হেল্পলাইন নম্বর এবং জিপিএস পদ্ধতি রয়েছে।

বাসের ভিতরে, বাইরে এবং যাত্রী প্রতিক্ষালয়ে মহিলা হেল্পলাইন নম্বর রাখার পরার্মশও দেওয়া হয়েছে।

বাসের ভিতরে, বাইরে এবং যাত্রী প্রতিক্ষালয়ে মহিলা হেল্পলাইন নম্বর রাখার পরার্মশও দেওয়া হয়েছে। ছবি: আনন্দবাজার অনলাইনের আর্কাইভ থেকে।

শুক্রবার ওই দুই আবেদনকারীর মামলাটির শুনানি হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি বিন্দলের মতে, দেশের বেশ কিছু রাজ্যে এই সুবিধা রয়েছে। এ রাজ্যেও তা করা সম্ভব কি না, তা দেখতে হবে। তা ছাড়া একটি বাসের যা বাজারমূল্য, তাতে বাসের ভিতরে একটি সিসিটিভি লাগানো যেতেই পারে। এর পরই ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব দেন রাজ্যের কাছে। বিচারপতি বিন্দল আরও বলেন, শুধু সরকার নয়, সাধারণ মানুষকেও এ নিয়ে সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, "এটা একটা মানসিকতা। যা ছোট থেকেই বদলানো দরকার। গণপরিবহণে কেমন ব্যবহার করা উচিত, তা শিশুপাঠ্য পুস্তকে থাকলেও ভাল হয়। রাজ্যের এ ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করা উচিত।"

আদালত যে পরামর্শগুলি দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে গণপরিবহণে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার। যাতে বাসের অন্দরমহল সহজে দেখা যায়। বাসের ভিতরে, বাইরে এবং যাত্রী প্রতিক্ষালয়ে মহিলা হেল্পলাইন নম্বর রাখার পরার্মশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশিই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্যও আলাদা নম্বরের ব্যবস্থা করা। এই পুরো পরিকাঠামো তৈরি করা আদৌ সম্ভব কি না এবং কত খরচ হতে পারে, তা-ও রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। ১২ অগস্টের মধ্যে এ বিষয়ে রাজ্যকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এখনও পর্যন্ত মহিলাদের সুরক্ষায় কী পরিকল্পনা ও অবস্থান নেওয়া হয়েছে, তা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর এবং রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে জানাতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আদালতে আইনজীবী অরিন্দম পাল জানান, শুধু মহিলারা নন, অনেক সময় পুরুষরাও গণপরিবহণে এই ধরনের ঘটনার শিকার হন। তবে বিচারপতিরা পাল্টা বলেন, সচরাচর পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনার উদাহরণ খুবই কম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE