Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

অভিযোগের বিচার না করে বেতন বন্ধ রাখা যাবে না, শিক্ষককে চাকরিতে বহাল করার নির্দেশ হাই কোর্টের

বিচারপতি নির্দেশ দিলেন, ওই শিক্ষককে অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে তাঁর বকেয়া বেতন সুদসমেত মিটিয়ে দিতে হবে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ২০:৪৮
Share: Save:

এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা না নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে তাঁর বেতন। ওই শিক্ষকের দাবি, স্কুলের খেলার মাঠে বেআইনি নির্মাণে বাধা দিয়েছিলেন বলেই কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ এনেছিলেন। এই অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন ওই শিক্ষক। সেই মামলায় রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধমক দিলেন বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়। নির্দেশ দিলেন, ওই শিক্ষককে অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে তাঁর বকেয়া বেতন সুদসমেত মিটিয়ে দিতে হবে।

সোমবার বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বেতন বন্ধ করে বসে থাকতে পারেন কি? আইন তো অন্য কথা বলছে। আপনারা এই ভাবে বসে থাকতে পারেন না।’’ এর পরেই তিনি বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাইস্কুলে ওই শিক্ষককে যোগদান করানোর নির্দেশ দেন।

২০১২ সালে বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাইস্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মিঞা। ২০১৬ সালে ওই স্কুলেরই টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব পান তিনি। সৌমেন্দ্রনাথের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পরিচালন কমিটির সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকেই তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজারাম ঘোষ ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওই শিক্ষকের অভিযোগ, কমিটির কয়েক জন সদস্য মিলে স্কুলের খেলার মাঠে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেন। তিনি বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেন কমিটির অন্য সদস্যেরা। তিনি আরও জানান, স্থানীয় থানাতেও প্রভাব খাটান সদস্যেরা। তার ফলে পুলিশ তাঁকে হুঁশিয়ারি দেন, স্কুলে ঢুকলে গ্রেফতার করা হবে।

ওই শিক্ষকের দাবি, দিনের পর দিন স্কুলে ঢুকতে না পেরে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন তিনি। শিক্ষা দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি। স্থানীয় পুলিশও তাঁকে স্কুলে ঢুকতে সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ। ওই শিক্ষকের আরও অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। শেষে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সেই পদত্যাগ পত্রের ভিত্তিতে স্কুল কোনও সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয় তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শিক্ষা দফতরের কাছে তিনি আবেদন করেন, তাঁকে যেন স্কুলে যোগদান করানো হয়।

ওই শিক্ষকের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী সোমবার আদালতে সওয়াল করে জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারেন না। এখন পর্যন্ত তাঁকে শোকজ বা সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। এক জন স্কুল শিক্ষককে কিছু না জানিয়ে তাঁর বেতন বন্ধ করা সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ। স্কুল যে সব অভিযোগ এনেছিল, তার কোনও প্রমাণ নেই। তা ছাড়া, কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এলে তখনই ব্যবস্থা না নিলে এবং তার পর তিন বছর কেটে গেলে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে সাত বছর বসে থাকতে পারেন না। এই সওয়ালের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনও যুক্তি দিতে পারেননি রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা। তার পরেই আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy