গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল কলকাতা হাই কোর্টে। হঠাৎই বিচারপতির প্রশ্ন ছুটে এল পুলিশকে লক্ষ্য করে। স্বরে স্পষ্ট বিরক্তি। বিচারপতি পুলিশের কাছে জানতে চাইলেন, ‘‘আপনারা তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে তাঁকেও কেস দিতেন দেখছি!’’
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল পুলিশ। বুধবার সেই মামলারই শুনানি চলছিল হাই কোর্টে। বিচারপতি বিদ্যুতের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।
বিচারপতি সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘পুলিশ আগে ধারা যোগ করে দেয়। পরে তদন্ত করে দেখে আদৌ অপরাধটি ধর্তব্যযোগ্য কি না। ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ এখন জীবিত নেই। তা হলে কী যে করতেন! হয়তো তাঁকেও অভিযুক্ত করে দিত পুলিশ।’’
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে থাকাকালীন বহু বিতর্কে জড়িয়েছেন বিদ্যুৎ। মেয়াদ ফুরোনোর পর বিদ্যুৎকে পাঁচটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে নোটিস দেয় শান্তিনিকেতন থানা। পুলিশের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান বিদ্যুৎ। পাল্টা পুলিশও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে হাই কোর্টে।
এমনই একটি মামলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা বিদ্যুতের একটি চিঠির প্রসঙ্গও জড়িয়ে দেয় পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা সেই চিঠিতে বিদ্যুৎ বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়ে। আদালতে বিচার চলাকালীন ওই চিঠির প্রসঙ্গ উঠতেই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এর সঙ্গে মামলার সম্পর্ক কী? বিচারপতি সেনগুপ্ত সরাসরিই পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ওই চিঠিতে ধর্তব্যযোগ্য অপরাধ কী রয়েছে তা-ই তো স্পষ্ট নয়!’’
পুলিশের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার মানে এই নয় যে, দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা লাগতে পারে বা গুজব থেকে অশান্তি ছড়াতে পারে।’’ চিঠির প্রসঙ্গটি অমূলক ভাবে মামলার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা বোঝাতেই পুলিশকে কটাক্ষ করে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টেনে আনেন বিচারপতি। বিচারপতি মন্তব্য করেন, এমন হলে হয়তো রবি ঠাকুরকেও ছাড়ত না পুলিশ!
তবে বিদ্যুতের মামলায় বুধবার আদালতের আরও ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে পুলিশকে। প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, তিনি এক টোটোচালককে টোটো চালাতেও বাধা দিয়েছেন। ওই অভিযোগ শুনেও পুলিশকে কটাক্ষ করে বিচারপতির সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এই সব অভিযোগ করে আপনারা রাজ্য সরকারকেই অপমান করছেন। আমি বিশ্বাস করি না, রাজ্যের উচ্চপদস্থ কেউ পুলিশকে এমন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’’
এর পরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, বিদ্যুতের বিরুদ্ধে এখনই পুলিশ কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না। এমনকি, আদালতের নির্দেশ ছাড়া এই মামলায় চার্জশিট বা কোনও তদন্ত রিপোর্টও দিতে পারবে না পুলিশ। আগামী ১১ জানুয়ারি বিকেল ৩টেয় এই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা হাই কোর্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy