অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। কুন্তল ঘোষ (ডান দিকে)। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কুন্তল ঘোষের চিঠি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার তদন্ত সবে অর্ধেক পথ পেরিয়েছে বলে কলকাতা হাই কোর্টকে জানাল সিবিআই। বুধবার প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ওই মামলায় এখনও তাঁদের কিছুটা সময় প্রয়োজন। যা শুনে আদালত পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, ‘‘সত্য খুঁজতে আর কত দিন সময় লাগবে?’’
বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হার বেঞ্চে শুনানি ছিল প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার। সেখানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক এবং নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তলের চিঠি সম্পর্কিত তদন্ত কতটা এগিয়েছে তা জানতে চাওয়া হয় তদন্তকারীদের কাছে। এই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তারা জানায়, ইতিমধ্যে অভিষেক এবং কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ বাকি আছে। তাই তাদের কিছুটা অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। যা শুনে দৃশ্যতই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি সিন্হা।
সিবিআইয়ের কাছে বিচারপতি জানতে চান, ‘‘সত্য খুঁজতে আর কত দিন সময় লাগবে? এই তদন্তের অগ্রগতি কোথায়? অভিযুক্ত সব তথ্য স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু তদন্ত তো সঠিক পদ্ধতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার!’’ এর জবাবে সিবিআই জানায়, প্রেসিডেন্সি জেলের একটি সিসিক্যামেরার ফুটেজ না পাওয়াতেই দেরি হচ্ছে। ওই ফুটেজ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাই কোর্টে জমা রয়েছে। সেটি হাতে পেলেই তদন্ত অনেকটা এগিয়ে যাবে। শুনে সিবিআইকে বিচারপতি সিন্হা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কত দ্রুত এই তদন্ত শেষ করতে পারবেন?’’ উত্তরে সিবিআই বলে, ‘‘দ্রুত তদন্ত শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’
বুধবার প্রাথমিকের নিয়োগ মামলা নিয়ে ইডিকেও বিচারপতি সিন্হার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বিচারপতি জানতে চান, ‘‘তদন্তে যুক্ত ইডি অফিসাররা দক্ষ তো?’’ এর জবাবে ইডি বলে, ‘‘নিশ্চয়ই! তারা যোগ্য।’’ শুনে বিচারপতি সিন্হা ইডিকে নির্দেশ দেন, এক মাস পরে নিয়োগের তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে।
পরে কুন্তলের মামলায় প্রেসিডেন্সি জেলকে বিচারপতি নির্দেশ দেন, ‘‘কুন্তল ঘোষের উপর নজর রাখবেন জেল সুপার। তিনি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করবেন। আদালত চাইলেই সেই ফুটেজ পেশ করতে হবে।’’
আগে যা হয়েছে
নিয়োগ মামলায় অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন অভিযুক্ত কুন্তল। কাকতালীয় ভাবে, কুন্তল যে দিন এই অভিযোগ করেন, তার আগের দিনই অভিষেক কলকাতার শহিদ মিনারের সভায় একই অভিযোগ করেছিলেন। তিনি মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষের মতো নেতা যখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে ছিলেন, তখন তাঁদেরও অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছিল। কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলাটি এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ওঠে। তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনের একই ধরনের দাবি কাকতালীয় হতে পারে না। এই মামলায় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি বলেছিলেন, দরকারে অভিষেককেও জেরা করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআই। নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে পাল্টা আবেদন করেছিলেন অভিষেক। এর পর মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সেখান থেকে ফেরে হাই কোর্টে। বেঞ্চও বদল হয়। বিচারপতি সিন্হার রায়ে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা বা প্রত্যাহারের যে আবেদন অভিষেক করেছিলেন, তার কোনও সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই কারণে অভিষেক এবং কুন্তলকে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন অভিষেক। সেই মামলারই শুনানি চলছে আদালতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy