Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার নয় কেন? ‘ছাত্র সমাজ’-এর আহ্বায়কের গ্রেফতারির মামলায় প্রশ্ন হাই কোর্টের

‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা মিছিলের অন্যতম আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়িকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার তার শুনানি ছিল।

(বাঁ দিকে) আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায়। ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর মিছিলের অন্যতম আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ি (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায়। ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর মিছিলের অন্যতম আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ি (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ১৭:২৫
Share: Save:

‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামক সংগঠনের ডাকা মিছিলের আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়িকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শুক্রবার বিকেলে সেই মামলার শুনানি শেষে রায়দান সাময়িক ভাবে স্থগিত রেখেছে হাই কোর্ট। তবে শুনানি চলাকালীন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের প্রসঙ্গ উঠেছে। তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

শুক্রবার সায়নের গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির ছিল তাঁর পরিবারও। সায়নের পক্ষ থেকে তাঁর আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল কাউকে আঘাত করেননি, পুলিশকে আক্রমণ করেননি। এমন কোনও উদাহরণ পুলিশ দেখাতে পারবে না। তা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, সায়নেরা যে মিছিলের আয়োজন করেছিলেন, তার জন্য পুলিশের প্রয়োজনীয় অনুমতি নেননি। ওই মিছিল থেকে অশান্তি হয়েছে। তার দায় সায়নকেই নিতে হবে।

বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়েছে। রাজ্যের কাছে বিচারপতি জানতে চান, যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁকে কি কোনও হামলা করতে দেখা গিয়েছে? বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, একটি কর্মসূচি থেকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণে কর্মসূচির আহ্বায়ককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আরজি করে যা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। এই যুক্তিতে আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষও তার দায় এড়াতে পারেন না। তাঁকে কি পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে?

উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই সন্দীপের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল আরজি করে। অভিযোগ, তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। তদন্ত প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারেন। আন্দোলনের চাপে পড়ে সন্দীপ পদত্যাগ করেন। হাই কোর্ট তাঁকে লম্বা ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। গত ১৬ অগস্ট থেকে আরজি করের ঘটনায় সন্দীপকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই।

শুক্রবার সায়নের গ্রেফতারির মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, সায়নের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ফ্লেক্স ছেঁড়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আইনজীবীর প্রশ্ন, পুলিশ কি কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি রক্ষা করছে? সায়নের বিরুদ্ধে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলেও আদালতে জানিয়েছেন তিনি।

রাজ্যের তরফে জানানো হয়, সায়নের ডাকা মিছিলের জন্য পুলিশের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া, গত মঙ্গলবার দু’টি বলে পাঁচটি মিছিল বার করা হয়েছিল। ওই মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়েছে। মিছিল শান্তিপূর্ণ হয়নি বলে দাবি করেছে রাজ্য। তার প্রমাণস্বরূপ মিছিলে অশান্তির কয়েকটি ছবিও আদালতে দেখানো হয়েছে। হাই কোর্ট প্রশ্ন করে, সায়ন কোন রাজনৈতিক দলের নেতা? রাজ্য জানায়, তিনি ছাত্র নেতা। এর পর বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, ‘‘ওই ছাত্রনেতাকে কী ভাবে এত প্রভাবশালী বলছেন? তিনি কি এতই জনপ্রিয় যে তাঁর আহ্বানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে গেলেন? তাঁর কী অতীত রয়েছে? সায়ন কি সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন? না কি গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল!’’

বিচারপতি সিংহ জানান, আরজি করের ঘটনায় মানুষ মর্মাহত। ধৃত ছাত্র নেতা প্রভাবশালী নন। ওই ঘটনা ঘটার আগে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও নেই। এই পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে রাজ্যের পাল্টা যুক্তি, নবান্ন অভিযান নিয়ে সায়ন প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন। পাল্টা বিচারপতি মন্তব্য, ‘‘অনেক রাজনৈতিক নেতাও তো প্ররোচনামূলক ভাষণ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? তা ছাড়া, ওই ছাত্র নেতা সরাসরি নবান্ন অভিযানের অশান্তিতে জড়িত, এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।’’ সায়নকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।

উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত এই মামলার রায়দান সাময়িক ভাবে স্থগিত রেখেছে। শুক্রবারই রায় ঘোষণার সম্ভাবনা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy