কেশিয়াড়িতে পঞ্চায়েত ভোটে জেতার পরেও বোর্ড গঠন করতে না দেওয়ার অভিযোগ। বাঁ দিকে জয়ী প্রার্থী, হাতে বোর্ডের নির্দেশ। ডান দিকে, বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। নিজস্ব চিত্র
হাইওয়ে হয়ে সরু বা চওড়া রাস্তার এক-একটা মোড় পার করছেন গাড়ির চালক, আর বলছেন, ‘‘যে রাস্তা দিয়ে এখন যাচ্ছি, এটা তৃণমূলের। আগের রাস্তাটা ছিল বিজেপির এলাকায়।’’ এ ভাবে গোটা দিন পথ চিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার শেষে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন অবশ্য কোনটা সত্যিই তৃণমূলের আছে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। রাতারাতি সব বিজেপি হয়ে যাচ্ছে শুনছি!’’
গত ২৩ মে লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে রাজনৈতিক ভাবে কার্যত নতুন মানচিত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের। লোকসভা ভোটের আগে এখানকার মোট ১৫টি বিধানসভার মধ্যে ১৪টিই ছিল তৃণমূলের দখলে। একমাত্র খড়্গপুর সদর কেন্দ্রটি ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, আটটি ধরে রাখতে পেরেছে তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে রয়েছে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই। দিনদিন এই ব্যবধান আরও কমেছে বলে তৃণমূলের স্থানীয়দের দাবি। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে ভিড়ছেন। শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেই তিন লক্ষ সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিজেপি।
কাটমানি, দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার তৃণমূলের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে কেশপুর। মেদিনীপুর পুরসভার এক কাউন্সিলর বলছিলেন, ‘‘এই লোকসভা নির্বাচনেও কেশপুর থেকে ৯২ হাজারের লিড পেয়েছেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব। সেই কারণেই ঘাটাল কেন্দ্রটি জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু, এখন ওই কেন্দ্রেই সে ভাবে তৃণমূলের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টে কেশপুরেই বিজেপির ব্লক স্তরের সভা দেখে মনে হচ্ছে জেলার সভা।’’
রাতারাতি পরিবর্তন কেন? পশ্চিম মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি শমিত দাশ আবার বলেন, ‘‘মানুষ দেখলেন, পাঁচ বছরের মধ্যেই অঞ্চল সভাপতির প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি হয়ে গেল। কিন্তু তাঁর বাড়ির জন্য সরকার যে টাকা দিচ্ছে, তা হাতে এসে পৌঁছচ্ছে না। তার সঙ্গে বেআইনি বালি, মোরামের খাদানের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলকে মানুষ মেনে নেয়নি। তাই বিজেপিকে বেছে নিয়েছে।’’ কেশিয়াড়ির এক বিজেপি মণ্ডল সভাপতি সনাতন দলুইয়ের আবার দাবি, ‘‘তৃণমূল নিচু স্তরের কর্মীদের দুর্নীতি চেপে রাখতে পারেনি। তৃণমূলের উপরে রাগ থেকেই মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। বিজেপির জেতা পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করতে দিচ্ছেন না ওঁরা।’’
এই দাবি উড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভুল বুঝেছিলেন। তাঁরা এখন দেখছেন, বিজেপি বলে কেউ নেই, এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিপিএমের সেই হার্মাদেরা। এতেই মানুষ বিজেপির থেকে দূরত্ব বোধ করছেন।’’ সেইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘মানুষকে আমরা বোঝাচ্ছি, বেঁচে থাকার জন্য জাতপাত নয়, চাই পেটের ভাত, কাজ, শিক্ষা। এই সব উন্নয়নই দিয়েছে তৃণমূল। এখনও পর্যন্ত ২০টা জনসংযোগ যাত্রা করেছি, সবক’টিতেই আশাতীত সাড়া পেয়েছি।’’
তৃণমূলনেত্রীও পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষের মন পেতে দাওয়াই দিয়েছেন। সম্প্রতি তৃণমূল ভবনে ওই জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে ফিরে এক বিধায়ক বলেন, ‘‘দিদি বলেছেন, জেলার বেশ কিছু কমিটির রদবদল করা হবে। এর মধ্যেই কেশপুরের সভাপতির সঙ্গে এক জন কার্যকরী সভাপতিকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। দলের জনসংযোগ যাত্রাকে অঞ্চল স্তর পর্যন্ত নামাতে হবে। ২১ জুলাইকে কেন্দ্র করে প্রতি ব্লক, প্রতি অঞ্চলে মিটিং, মিছিল করতে হবে।’’ এর সঙ্গেই জেলার পর্যবেক্ষক হিসেবে নিজের মতো করে কাজ করার কথা শুভেন্দু অধিকারীর।
কেশপুর থানা লাগোয়া মিষ্টির দোকানের মালিক টিঙ্কু মণ্ডল অবশ্য বলছিলেন, ‘‘এতদিন তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি! এ বার বিজেপিকে দিলাম। কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার না হলে সমস্যা।’’ কিন্তু রাজ্যের? মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘রাজ্যে যাঁরা বিজেপি নিয়ে লাফাচ্ছেন, তাঁরা হাতে গোনা। মিটিং-মিছিল তো সিপিএমও ভরায়, তাতে কী এসে যায়!’’ অজিতবাবুরও দাবি, ‘‘প্রমাণ হবে, কেশপুর তৃণমূলের শেষপুর হয়ে যায়নি!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy