Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bratya Basu

সুজনের স্ত্রীর নিয়োগ কি বৈধ? আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব তদন্ত হবে কি না: ব্রাত্য

ব্রাত্য বসু শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, সিপিএম রাজনৈতিক দল নয়। একটা সভা। অ্যাটিটিউড। যার প্রধান লক্ষণ কাজ না করে বড় বড় কথা বলা। অন্যের কাজে খুঁত ধরা।

image of Bratya Basu

ব্রাত্য সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, সুজনের স্ত্রী কোন কলেজে চাকরি করেন, কাল পর্যন্ত কেউ জানত না। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৩
Share: Save:

বিতর্ক শুরু হয়েছিল আগেই। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী কোন পদ্ধতিতে কলেজে চাকরি পেয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শাসকদলের কয়েক জন নেতা। এ বার সেই বিতর্কের বলকে আরও খানিকটা গড়িয়ে দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কী ভাবে সুজনের স্ত্রী চাকরি পেয়েছিলেন তা নিয়ে তদন্তের কথাও শুক্রবার শোনা গেল তাঁর মুখে। তবে সবটাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতিক্রমে হবে বলেও জানিয়েছেন ব্রাত্য। তদন্ত যদি হয়, তবে তা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাত্য।

ব্রাত্য শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএমকে একের পর এক তোপ দাগেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে এই সাংবাদিক বৈঠক করছি। সিপিএম রাজনৈতিক দল নয়। একটা সভা। ‘অ্যাটিটিউড’। যার প্রধান লক্ষণ কাজ না করে বড় বড় কথা বলা। অন্যের কাজে খুঁত ধরা। এই কুৎসা করার ট্র্যাডিশনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীও রয়েছেন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও একই কাজ করে যাচ্ছে।’’

এর পরেই সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর চাকরি নিয়ে কটাক্ষ করেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী কোন কলেজে চাকরি করেন, কাল অবধি জানতামই না। ওদের মতো কে কখন ট্রেনে, বাসে যাতায়াত করছে, বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করছে, আমরা তার খোঁজ করি না।’’ এখানেই থামেননি ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘১৯৭৯ সালে তৈরি হয়েছিল কলেজ সার্ভিস কমিশন। তখনও গ্রুপ সি এবং ডিকে ওরা কলেজ সার্ভিস কমিশনের আওতায় আনেনি। নথি থেকে তাই পরিষ্কার নয় যে, ওঁর (সুজনের স্ত্রী) ক্ষেত্রে পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ হয়েছিল কি না।’’

সুজনের স্ত্রীর চাকরি নিয়ে তদন্ত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্রাত্য। যদিও জানিয়েছেন, এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্ত করতে হবে কি না, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করব। কারণ মুখ্যমন্ত্রী যদি বলেন, আমার কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছ কেন, তাই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’ গত ১২-১৩ বছর ধরে কেন এই নিয়ে মুখ খোলেনি বর্তমান সরকার, সেই কারণও জানিয়েছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘উনি অবসর নিয়েছেন ২০২১ সালে। এই সরকারের বেতন নিয়েছেন এবং এখন পেনশন নিচ্ছেন। ১২-১৩ বছর ধরে এ নিয়ে আমরা কোনও কথা বলিনি। কারণ আমরা বদলা নয়, বদল চাই।’’

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বার বার তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেছে সিপিএম। সেই নিয়ে এ দিন সিপিএমকে একহাত নেন ব্রাত্য। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘সিপিএম হুমকি দিচ্ছে। কী বলতে চায়, ওদের কেউ স্কুল, কলেজে চাকরি করেননি? আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেককে জানি, যাঁদের পরিবারের সদস্যেরা চাকরি পেয়েছেন।’’ ব্রাত্য এও বলেন, ‘‘শ্বেতপত্রে সব লেখা থাকবে। তৃণমূল এক বারও বলেনি দুর্নীতি ছিল। সেই শ্বেতপত্রের ভিত্তিতে যদি কখনও কেউ মামলা করেন, আদালত যদি তদন্তের নির্দেশ দেয়, যদি দেখা যায় হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী বঞ্চিত?’’ ব্রাত্য দাবি করেছেন, পূর্বতন সরকারের আমলে হওয়া দুর্নীতিকে ইডি, সিবিআইয়ের তদন্তের আওতায় আনতে চেয়েছিলেন তিনি। এর পরেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বেন না।’’

সুজনের টুইটের জবাবও শুক্রবার দিয়েছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘উনি কে হরিদাস পাল? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী? পলিটব্যুরো সদস্য? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের তুলনা করছেন? দলে কী জায়গা রয়েছে ওঁর? সকাল থেকে বাইট দেওয়ার জন্য বসে থাকেন। যা হয়েছে, তা কাল পার্থ ভৌমিক বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। বাকিটা শ্বেতপত্রে প্রকাশ করা হবে।’’

গত শুক্রবার দলীয় বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট আমলে কারা কারা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। মমতার অভিযোগ, বাম আমলে স্রেফ চিরকুট দেখিয়ে অনেকের চাকরি হয়েছে। তার পরেই মুজফফর আহমেদের (কাকাবাবু) লেখা একটি কয়েক লাইনের চিরকুট সমাজ মাধ্যমে ছড়াতে শুরু করেছিলেন বামপন্থীরা। যেখানে তিনি ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, পশ্চিমবঙ্গ কমিটি’র লেটারহেডে ১৯৫৮ সালের ১২ জুন কবি নজরুলের গৃহভৃত্যের এক্স রে প্লেট এবং রিপোর্ট পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘‘আশা করি এই নিরাশ্রয় গরিব লোকটির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’’ বলা বাহুল্য, মমতার ‘চিরকুটে চাকরি’র পাল্টা হিসাবে ‘কাকাবাবু’র চিরকুটটি উপস্থাপিত করা হয়েছে।

মমতার অভিযোগের এক সপ্তাহের মাথায় এক ‘চিরকুট’-এর ছবি দিয়ে সুজনের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে রাজ্যের শাসকদল। সুজনকে তৃণমূলের কুণাল প্রশ্ন করেন, তাঁর স্ত্রী গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে কোন পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন? তিনি কি আদৌ কোনও পরীক্ষা দিয়েছিলেন? কী ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া? কুণালের বক্তব্য, তৃণমূল ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ সমর্থন করে না। কিন্তু যে ভাবে কয়েক জন বিরোধী নেতা টানা ব্যক্তি আক্রমণ করে যাচ্ছেন, তাতে রুচির বাইরে গিয়ে ‘চিরকুট’-এর মতো বিষয় আনতে হচ্ছে। কুণাল চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘আমাদের নিয়ে কুৎসা করার আগে আপনার পরিবারে আর কে কে আছেন, যাঁরা সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরি করেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন! না করলে তৃণমূল তা প্রকাশের দিকে যাবে।’’ তদন্তকারী সংস্থার কাছেও আর্জি জানিয়েছিলেন কুণাল। তিনি জানান, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে যেন বামফ্রন্ট জমানায় হওয়া চাকরিরও তদন্ত করে দেখা হয়। কুণালের অভিযোগের জবাব দেন সুজন। তিনি বলেন, ‘‘পদ্ধতি মেনে পরীক্ষা দিয়েই আমার স্ত্রী চাকরি পেয়েছিলেন। তৃণমূল যে চিঠি দেখাচ্ছে, সেটা জয়েনিং লেটার। ১৯৮৭ সালের। মিলি (সুজনের স্ত্রী) যে পদে চাকরি পেয়েছিলেন, সেই পদেই অবসর নিয়েছেন। বামফ্রন্ট আমলে যে কোনও দুর্নীতি হয়নি, এটাই তার প্রমাণ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bratya Basu Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy