Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Bonny Sengupta

মঙ্গলবার আবার তলব, ইডি-কে টাকা ফেরত দেবেন বনি? কী বললেন আনন্দবাজার অনলাইনে?

ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে যোগসূত্রে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। গত সপ্তাহে বৃহস্পতির পর মঙ্গলবার আবার তাঁকে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

Picture of Bonny Sengupta.

টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। ফাইল চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে যোগসূত্রে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তের। মঙ্গলবার আবারও তাঁকে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, কুন্তল যে টাকা দিয়ে বনিকে গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন, অভিনেতা তা ইডি-কে ফেরত দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে অভিনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। অভিনেতা তার জবাবও দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার সল্টলেকে ইডির আঞ্চলিক দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে প্রথম বার হাজিরা দেন বনি। তাঁকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে বনি দাবি করেন, কুন্তলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ২০১৭ সালে। সেই পরিচয়ের সূত্রেই তাঁদের মধ্যে ছবি তৈরি নিয়ে কথা হয়। কুন্তলের প্রযোজনায় অভিনয়ের জন্য নগদে কোনও অগ্রিম না নিলেও, বনির দাবি, কুন্তল তাঁকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। যার দাম ৩৫-৪০ লাখ টাকা। বনির আরও দাবি, ছবি তৈরি না হলেও, তিনি কুন্তল আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হাজিরার পারিশ্রমিকেই সমস্ত হিসাব মিটিয়ে দেন।

তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, ওই বিলাসবহুল গাড়ির দামই বনি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে ইডির তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো না হলেও ওই সূত্রের দাবির ভিত্তিতে বনির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চায় আনন্দবাজার অনলাইন। জবাবে বনি বলেন, ‘‘এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। দুঃখিত।’’ ইডি সূত্রে যা দাবি করা হচ্ছে, তা তিনি অস্বীকার করছেন কি না, এই প্রশ্নও করা হয় বনিকে। তার জবাবেও একই কথা জানিয়েছেন বাংলা ছবির ওই নায়ক।

ইডি সূত্রের খবর, কুন্তলের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের পর থেকে কয়েক কোটি টাকা জমা পড়েছিল। তদন্তকারীদের সন্দেহ, তা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা হয়ে থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় সংস্থার আরও দাবি, সেই টাকা অন্তত ৫০টি অ্যাকাউন্টে সরানো হয়েছে। তার মধ্যে সোমা চক্রবর্তী নামে এক বিউটি পার্লার ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লক্ষ টাকা গিয়েছে। সেই ব্যাপারে সোমাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, একই ভাবে বনির গাড়ির জন্যও টাকা দিয়েছেন কুন্তল। যদিও বনি পরে সেই গাড়ি বিক্রি করে আর একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন। ইডির ওই সূত্রের দাবি, কুন্তল একটি স্টুডিয়ো তৈরির পরিকল্পনাও করেছিলেন। সেই সম্পর্কেও বনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে বনি স্বীকার করেন, কাজের সূত্রে আলাপ হলেও ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কুন্তলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। তবে নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের ‘জড়িত থাকা’র ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। বনি বলেন, ‘‘বিনোদন জগতে এ ভাবে অতীত ঘেঁটে কাজ করা সম্ভব নয়।’’ বনির মা পিয়া সেনগুপ্তও জানান, বিনোদন জগতের লোকেরা অনুষ্ঠান করে টাকা আয় করেন। এটাই তাঁদের রুজিরোজগার। বনিও তা-ই করেছেন।

ইডিরও একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, কেউ দুর্নীতি করলে তাঁর সঙ্গে কোনও রকম ব্যবসায়িক লেনদেনকে ‘অবৈধ’ বলে দেওয়া চলে না। তবে সে ক্ষেত্রে লেনদেনের যথাযথ কাগজপত্র দেখানো জরুরি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা দেখাতে না পারলে তিনিও ‘অভিযুক্ত’ হতে পারেন। তাঁদের আরও যুক্তি, পেশাদার শিল্পী বা ব্যবসায়ীদের আয়কর রিটার্নে লেনদেনের উল্লেখ থাকে। সেই কারণে বনিকে তাঁর আয়করের নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। বনিও সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, ইডিকে তিনি সব রকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

প্রসঙ্গত, সারদাকাণ্ডে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকেও টাকা ফেরত দিতে দেখা গিয়েছিল। এক সময় সারদার মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন মিঠুন। তার জন্য তিনি যা পারিশ্রমিক বাবদ সব মিলিয়ে যা পেয়েছিলেন (আয়করের অংশ কেটে), সেই পরিমাণ টাকার একটি ড্রাফ্ট ইডির হাতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। এখন দেখার, নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতে বনিও সেই পথে হাঁটেন কি না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE