উত্তপ্ত: পুলিশকে তাড়া। (নীচে) অবরোধ। নানুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
মিথ্যা অভিযোগে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ— সেই অভিযোগে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল নানুরের বন্দর। অশান্তি শুরু হয়েছিল পথ অবরোধে। বন্দর সহ শাঁকবাহা, পিলখুণ্ডি, পুন্দরা গ্রামের শ’পাঁচেক বিজেপি কর্মী-সমর্থক তাতে শামিল হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। ফাটতে থাকে বোমা, চলে এক রাউন্ড গুলিও। এক মহিলা ও থানার ওসি-র মাথা ফাটে। ভোটার শেখ নামে পিলখুণ্ডি গ্রামের এক বিজেপি সমর্থক বোমায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁর পেট এবং হাতের তালুতে আঘাত রয়েছে। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, বন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে তৃণমূলের লোকেরা তাঁর দিকে বোমা-বোঝাই ঝোলা ছুড়ে দেয়। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বোমাবাজি করতে গিয়েই আহত হয়েছেন ভোটার শেখ।
নানুরের উচকরণ পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত বন্দর গ্রাম। লোকসভা ভোটের পঞ্চায়েতভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে ৬টিতে তৃণমূল আধিপত্য বজায় রেখেছে। ৯টিতে এগিয়ে বিজেপি।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সেই আক্রোশেই বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের উপরে শাসকদলের ‘নির্দেশে’ পুলিশ মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে শাকবাহার মণ্ডল নামে পিলখুণ্ডি গ্রামের এক বিজেপি কর্মীকে ‘বিনা অপরাধে’ পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তার পরেই সকাল ১০টা নাগাদ বন্দর বাসস্ট্যান্ডে নানুর-বাসাপাড়া সড়ক অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। অবরোধ তুলতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। সালমাবিবি নামে এক মহিলার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাতের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানেনি। ওই মহিলার মাথা ফেটে যায়। তিনি রাস্তায় পড়ে যান। তাঁকে তুলতে গিয়ে ‘আক্রান্ত’ হন নানুর থানার ওসি মনোজ সিংহ। বিক্ষোভকারীদের লাঠিতে তাঁর মাথা ফাটে বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে। তাতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারী লাঠি-বাঁশ নিয়ে পুলিশকে তাড়া করে। পুলিশ ছুটে গিয়ে গ্রামের বাইরে সেতুর কাছে আশ্রয় নেয়। অভিযোগ, সেই সময় গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজি শুরু হয়। এক রাউন্ড গুলিও চলে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, গ্রাম দখল করতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ মানেননি। খবর পেয়ে পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায়, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার, নানুরের সিআই ফিরোজ হোসেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় স্কুলশিক্ষক, এক মুদিখানার দোকানির কথায়, ‘‘অনেক সময় নানুরের বিভিন্ন জায়গা অগ্নিগর্ভ হলেও আমাদের গ্রামে অশান্তি ছিল না। লোকসভা নির্বাচনের দিন থেকে তৃণমূল-বিজেপির ক্ষমতাদখলের লড়াইয়ে সেই শান্তি হারিয়েছে। আমরা দু’পক্ষের হাতেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি।’’
এ দিন বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে পিলখুণ্ডি গ্রামেও। আব্দুল আলিম নামে এক তৃণমূল কর্মীর খড়ের পালুই বোমা মেরে পুড়িয়ে দেওয়া এবং শেখ সবুজের অ্যাসবেস্টর টিনের চাল উড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। অন্য দিকে ওই গ্রামে বিজেপির কার্যালয় বোমা মেরে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দু’পক্ষই অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই গ্রামেরই একটি নির্মীয়মান বাড়ি থেকে থলে ভর্তি ১১টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। শাঁকবাহা গ্রামেও বোমাবাজি হয়। পালিটা, ভাতিয়ার সহ বিভিন্ন গ্রামে বোমাবাজির আওয়াজ শোনা যায়।
বিজেপির নানুর মণ্ডল কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল গ্রাম দখলের জন্যে বোমাবাজি করেছে। ওরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের পিছনে পুলিশ লাগিয়ে দিচ্ছে। আজ আমাদের এক কর্মীকে পুলিশ বিনা অপরাধে তুলে নিয়ে যায়। তার প্রতিবাদে আমাদের লোকেরা পথ অবরোধ করেছিলেন।’’ তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গ্রাম আমাদের দখলেই রয়েছে। দখলের প্রশ্নই আসে না। ওরা পথ অবরোধ করেছিল বলে শুনেছি। পুলিশ রাস্তা অবরোধমুক্ত করতে যায়। তাই যা হয়েছে তা বিজেপি আর পুলিশের মধ্যে হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ওই ঘটনার সম্পর্ক নেই।’’
পুলিশ জানায়, অপরাধমূলক অভিযোগ থাকায় ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে। পরে ঝামেলা পাকানোর জন্য এক মহিলা সহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy