—ফাইল চিত্র
ফেসবুকের একটি জনপ্রিয় কোভিড হেল্প গ্রুপেই চোখে পড়েছিল পোস্টটি— ‘রেমডেসিভিয়ার বা যে-কোনও জরুরি ওষুধ লাগলে ইনবক্সে যোগাযোগ করুন।’
খোলা বাজারে যে-ইঞ্জেকশন বিক্রিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা কোনও ব্যক্তির সংগ্রহে কী ভাবে থাকা সম্ভব? প্রশ্নাকুল কৌতূহল নিয়েই ইনবক্সে মেসেজ পাঠানো গেল: ‘রেমডেসিভিয়ার চাই। পাব?’
সায়ন দাস নামে চিহ্নিত ওই প্রোফাইল থেকে উত্তর এল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই: ‘হ্যাঁ, দিদি। আপনার লোকেশনটা বলুন।’ দাম কত? জবাব এল: ‘আপনার ফোন নম্বরটা দিন।’ তার পরে ওই ব্যক্তি যে-সব ওষুধের ছবি পাঠাতে লাগলেন, তার অধিকাংশ সংগ্রহ করতে মাথা চাপড়াতে হচ্ছে রোগী পরিবারকে। অ্যাম্ফোটেরিসিন, ফ্যাঙ্গিসাম, স্ট্রেপটোকিনেস, টোসিলিজ়ুবাম— কী নেই তালিকায়! যে-কোনও ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটরকে লজ্জায় ফেলে দেবে।
ফোনে কথা শুরু করতেই এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ। কালোবাজারের ক্রেতা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার পরে একে একে সব তথ্য জানা গেল। রোগীর একটা প্রেসক্রিপশন, আধার কার্ড চাই। বাকি সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ওষুধের ওই দালাল জানালেন, এই নামেই ওষুধ রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। তাঁর বেআইনি সহায়তার পারিশ্রমিক বাবদ ইঞ্জেকশনের ফাইল-পিছু হাজার চারেক টাকা বেশি লাগবে। কোনও জায়গায় গিয়ে ওষুধ নেওয়া যাবে না। ক্রেতার বাড়ির ঠিকানায় লোক পৌঁছে যাবে। শেষ পর্যন্ত নিজের কল্পিত করোনাক্রান্ত পিসিমার জন্য চারটি রেমডেসিভিয়ার ইঞ্জেকশন সাড়ে ২২ হাজার টাকায় রফা হল। আদতে যার একটির বাজারমূল্য ৮০০ টাকা।
এমআরপি বা সর্বাধিক খুচরো দামের চেয়ে এত টাকা বেশি কেন? সায়নের জবাব, ‘‘আমার জোগাড় করা, পৌঁছনোর একটা চার্জ নেই!’’
এ ভাবেই সমাজমাধ্যমে সকলের চোখের সামনে চলছে জীবনদায়ী ওষুধের কালোবাজারি। এই বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও এমন ধরনের পোস্ট শেয়ার হচ্ছে। ‘জীবনদায়ী ইঞ্জেকশনের খোঁজ চাই’ বলে আবেদন জানিয়ে দিনে পাঁচ থেকে ছ’টা পোস্ট রোজই থাকে টাইমলাইনে, জানাচ্ছেন কোভিড ভলান্টিয়ার বর্ষণা তিতির। তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ বিক্রিতে নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরেও আর্জি আসছে সমানে। ব্যক্তিগত মেসেজে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই ধরনের বহু পোস্ট দেখি সারা দিন।’’
বর্ষণা জানান, এপ্রিলের প্রথম দিকে ই-মেল রোগীর পরিবারের কাছে ওষুধ সংস্থা বা ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁরা। কিন্তু রেমডেসিভিয়ার, টোসিলিজ়ুবামের মতো জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন খোলা বাজারে বিক্রির উপরে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারির পরে তাঁরা এই কাজে কাউকে উৎসাহিত করছেন না। কোভিড স্বেচ্ছাসেবকদের বক্তব্য, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলেই রোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে এই ধরনের পোস্ট করছেন বা বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে ওষুধ খুঁজছেন। আর সেই সুযোগে কোভিড হেল্প গ্রুপে ঢুকে ব্যবসা করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা সংস্থা।
স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই জাতীয় ওষুধের যথাযথ ব্যবহারের জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকেই রোগীর যাবতীয় তথ্য-সহ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে ই-মেল পাঠাতে হবে। সংস্থা সেই তথ্যের ভিত্তিতে সরাসরি হাসপাতালে ওষুধটি পাঠিয়ে দেবে। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়ে রাখতে হয়।’’ স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, সব হাসপাতালেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কত শয্যা রয়েছে, সেখানে কত রোগী আছেন, তাঁদের মধ্যে ক’জনের ওই ওষুধ দরকার— পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে তবেই ওই ওষুধ
স্টকে রাখা যায়। রোগীর আত্মীয়স্বজনকে এই ধরনের ওষুধের প্রেসক্রিপশন দেওয়া নিষিদ্ধ।
এর বাইরে কোভিডের চিকিৎসায় জীবনদায়ী কয়েকটি ওষুধ পাওয়ার দ্বিতীয় কোনও পথ নেই। অথচ করোনার দ্বিতীয় পর্বে সংক্রমণের বাড়াবাড়ি শুরু হতেই মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচাতে দিশাহারা পরিবার ২৫-৩০ হাজার টাকাতেও রেমডেসিভিয়ার কিনতে রাজি হয়ে যাচ্ছে। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy