প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।— ফাইল চিত্র।
কৃষ্ণনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা ঘিরে দলের অন্দরে উত্তেজনার মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাঁকুড়ায়। দিন দুয়েক আগে প্রকাশ্যে আসা একটি অডিয়ো ক্লিপকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার। তার রেশ এখনও কাটেনি। এ বার পদ্ম পতাকা হাতে নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষের ছবিতে কালি লেপে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েক জন। তাঁরা নিজেদের বিজেপি কর্মী বলেই দাবি করেছেন। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সুভাষকে প্রার্থী করা চলবে না। তাঁকে প্রার্থী করা হলে দলের হার অবশ্যাম্ভাবী। দলের রাজ্য নেতৃত্ব তাঁদের কথা না শুনলে ভোটে ‘বুঝিয়ে দেওয়ার’ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
এ ব্যাপারে সুভাষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন ধরেননি। কিন্তু বিজেপির জেলা নেতৃত্বের দাবি, যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা দলীয় কর্মী নন। এই ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের মদত রয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসকদলও।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষকে নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের একটি অংশ। বাঁকুড়া শহর ছাড়াও ছাতনা ও সিমলাপাল এলাকায় একাধিক বার বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে সুভাষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলেছে। মাস কয়েক আগে দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তালাবন্দিও করেছিলেন বিক্ষুব্ধেরা। সম্প্রতি ফোনে কথোপকথনের একটি অডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই অডিয়োয় সুভাষের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দাবি, অডিয়ো ক্লিপে যাঁর কণ্ঠ শোনা গিয়েছে, তিনি বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রীশেখর দানা। সেই আবহেই শনিবার বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলায় সুভাষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালেন এক দল যুবক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছবিতে কালি লেপে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ছবিতে জুতো মারতে ও থুতু ছেটাতেও দেখা গিয়েছে তাঁদের। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান তোলেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার দূর হঠো’।
বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বে থাকা কৌশিক সিংহ বলেন, ‘‘আমি গত বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির কনভেনরের দায়িত্বে ছিলাম। গত পাঁচ বছরে সুভাষ সরকার বাঁকুড়ার মানুষের জন্যে কাজ করা তো দূরের কথা, নিজের দলের কর্মীদের দিকেই তাকাননি। করোনার সময় যখন মানুষ হাহাকার করছিলেন, তখন তিনি এক বছর ধরে বাঁকুড়ার বাইরে ছিলেন। নিজের তোষামোদকারী কিছু লোককে নিয়ে দল পরিচালনা করায় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা নির্বাচন, সবেতেই বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। আমরা চাই, বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে সুভাষ সরকারকে প্রার্থী না করে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হোক। না হলে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির হার অবশ্যম্ভাবী।’’ আর এক বিক্ষোভকারী মোহিত শর্মা বলেন, ‘‘সুভাষ সরকার নানা কুকীর্তির সঙ্গে যুক্ত। আমরা বার বার তা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব আমাদের কথায় আমল না দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন। সামনের নির্বাচনে আমরা তাঁদের বুঝিয়ে দেব, আমরা দলের কী ধরনের কর্মী।’’
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘যারা এই কাজ করেছে, তারা আগেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজসের কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। সামনের লোকসভা নির্বাচনে যখন বিজেপির জয় এক প্রকার নিশ্চিত, তখন ফের তৃণমূল নেতাদের কথায় তারা এই ধরনের বিশৃঙ্খলা করছে। এই কর্মসূচিতে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার করা হয়েছে বলে শুনেছি । এ ব্যাপারে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’’ পাল্টা তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা তালড্যাংড়ার বিধায়ক অরুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুভাষ সরকার গত পাঁচ বছর সাংসদ থাকলেও কোনও কাজ করেননি। বিজেপির একাংশ তা বুঝতে পেরেই এখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এটা বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy