ছেলের দেহ নিয়ে মা। —নিজস্ব চিত্র
দিনরাতের ফুটবল প্রতিযোগিতা। টানটান ফাইনাল শেষে ময়দান ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎই বোমার শব্দ। শনিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের মোহাড়ের করণপাড়ায় সেই বোমাতেই মৃত্যু হল বিজেপি কর্মী দীপক মণ্ডল (৩০)-এর।
দীপকের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচার খিদিরপুর গ্রামে। ময়নার এক দিকে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর, অন্য দিকে পশ্চিমের সবং। খিদিরপুর ও সবংয়ের করণপাড়া গ্রামের মাঝে খাল পেরিয়ে অনেকের মতোই শনিবার সবংয়ে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন দীপক। ময়নার লোকজন কেন সবংয়ে খেলা দেখতে এসেছেন, তা নিয়েই ম্যাচের পরে গোলমাল বাধে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মোহাড়ের করণপাড়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের সামনে শোনা যায় বোমার আওয়াজ। স্থানীয়েরা দেখেন, পড়ে রয়েছেন দীপক।কোমরের নীচের অংশ ক্ষতবিক্ষত। সবং হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি তাঁকে।
বিজেপির অভিযোগ, খুন করা হয়েছে দীপককে। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের দাবি, প্রথমে গুলি ছোড়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। গুলি লাগেনি। পরে কাছ থেকে ৭-৮ জনের দুষ্কৃতী দল দীপককে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। কেন শুধু দীপককেই নিশানা করা হল? নবারুণের দাবি, ওঁকে আগেও একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বিজেপির সবং পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি উত্তম সামন্তের সরাসরি অভিযোগ, “তৃণমূলের প্রসাদরঞ্জন অধিকারী ও লালু ভুঁইয়ার মদতে বোমা মেরে খুন করা হয়।”
তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর অবশ্য দাবি, ‘‘ওই বিজেপি কর্মী অশান্তি পাকাতে বোমা নিয়ে যাচ্ছিল। বোমা ফেটে মারা গিয়েছে।’’ খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদও বলেন, “মৃতের শরীরের পেটের নীচের অংশ ছাড়া কোথাও ক্ষত নেই। আমাদের ধারণা, ওর কোমরে বোমা বাঁধা ছিল। সেটা কোনওভাবে ফেটে গিয়েছে।”
ঘটনায় সামনে আসছে মোহাড়ের পঞ্চায়েত প্রধান প্রসাদরঞ্জনের ময়নার একটি ইটভাটার কথাও। সবং ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলছেন, “সবংয়ে শনিবার এক বৈঠকে প্রসাদ অধিকারী ও লালু ভুঁইয়া ছিলেন। পরে ওঁরা মোহাড়ের দলীয় কার্যালয়ে যান। তার পরেই এই ঘটনা।’’ কিন্তু ইটভাটার সঙ্গে দীপক বা বোমার সম্পর্ক কী? স্থানীয় সূত্রের খবর, ময়নায় প্রভাব বেড়েছে বিজেপির। কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকতেন দীপক। ফিরে এসে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এলাকায় প্রভাব বাড়ছিল তাঁর। অবশ্য প্রসাদরঞ্জন বলেন, “ময়নার আমার ইটভাটা যেখানে, সেখানে ওই যুবকের বাড়ি নয়। ওঁকে চিনিও না।”
দীপকের স্ত্রী, এক ছেলে এবং মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শনিবার রাতেই সবংয়ে এসে ছেলের দেহ আঁকড়ে ছিলেন দীপকের মা সাবিত্রী মণ্ডল। থানায় অভিযোগ করেছেন তিনিই। সাবিত্রীর হাহাকার, “কী ভাবে কী হল কিছুই জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy