বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানে ধুন্ধুমার। —নিজস্ব চিত্র
লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান কিছুই বাদ গেল না বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানে। পুলিশের মারে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ। উলেন রায় নামে ওই বিজেপি কর্মীর বাড়ি শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবা এলাকায়। সন্ধ্যার দিকে শিলিগুড়ি পুলিশের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মিলেছে। ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে মাথায় চোট পান উলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আগে থেকে ঘোষণা করে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন দলীয় কর্মীরা। তাঁদের উপর নির্মম ভাবে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।’’ দিলীপের দাবি, লাঠিচার্জেই উলেনের মৃত্যু হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের অক্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের দলীয় কর্মী উলেন রায়ের।’’ তাঁদের দলের বহু কর্মী আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন বিজয়বর্গীয়।তবে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দাবি, ‘‘বিজেপি কর্মীরা অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। তবে সেই তুলনায় সংযম দেখিয়েছে শিলিগুড়ির পুলিশ।’’
মৃত বিজেপি কর্মী উলেন রায়। —নিজস্ব চিত্র
বিজেপির উত্তরবঙ্গ অভিযান ঘিরে সকাল থেকেই তেতে ছিল শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ। আগে থেকেই শহরের প্রায় সব কটি প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তিনবাতি মোড়ে জারি হয় ১৪৪ ধারা। কাঁদানে গ্যাস, জলকামান নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ। ডুয়ার্স-তরাইয়ের বিভিন্ন রাস্তায় ছিল নাকা চেকিং।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবারের কৃষক আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন মমতার
সে সব পেরিয়ে দুপুর দু’টো নাগাদ বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা তিন বাতি মোড়ে পৌঁছতেই উত্তেজনা চরম আকার নেয়। প্রথমে ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। তখন পুলিশ মাইকে ক্রমাগত ঘোষণা করতে থাকে, ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষণার কথা। সেই সঙ্গে বিজেপির এই জমায়েত অবৈধ বলেও জনানো হয়।
আরও পড়ুন: বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখল করতে দেব না, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মমতার
কিন্তু সে সব উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ব্যারিকেড ভেঙে বিজেপি কর্মীরা এগোতেই কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে পুলিশ। দু’টি জলকামান থেকে জল ছুড়েও বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চলে। উল্টো দিক থেকে বিজেপি কর্মীরাও পাল্টা ইট-পাথরবৃষ্টি শুরু করেন পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে। শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের বাধায় বিজেপি কর্মীরা পিছিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পর আবার এগিয়ে আসতে থাকেন। ব্যারিকেডের বাঁশ কাঠ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন বিজেপি কর্মীরা। এই ভাবে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলে সংঘর্ষ। মাঝে মধ্যে পুলিশও তেড়ে যায় বিজেপি কর্মীদের দিকে। গলি, ছোট রাস্তা থেকে দু’-এক জনকে ধরে লাঠিচার্জও করা হয়। আটক করা হয় বেশ কয়েক জনকে।
আহত এক বিজেপি কর্মীরা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র
পাশাপাশি বিজেপি কর্মী সমর্থকদের নিয়ে আসা একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তার মধ্যে কৈলাসের গাড়িও ছিল।গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে যায়। জেপির অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবে গাড়িগুলি ভাঙচুর করেছে।
অন্য দিকে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ বিবৃতি দিয়ে জানায়, একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছেন। পাথরছোড়া, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে পুলিশ সংযত ছিল। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বা লাঠিচার্জ করতে হয়নি। শুধু জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেই ওই দলের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।
অবশেষে বেলা চারটে নাগাদ পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। ধীরে ধীরে শুরু হয় যান চলাচল। তবে সকালের দিকে দিলীপ ঘোষ ট্রেন থেকে নেমে হোটেলে যাওয়ার সময় তাঁকে আটকায় বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। অন্য দিকে মিছিলে যাওয়ার পথে বিজেপির আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাকেও আটকানো হয় বলে দলীয় নেতৃত্বের অভিযোগ। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
দেখুন ভিডিয়ো:
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy