বিরোধী শিবির বরাবরই পুজোর আগে একটি বড় কর্মসূচি নেয় দলীয় ‘মেশিনারি’র শক্তি মেপে নিতে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি রয়েছে মঙ্গলবার। কিন্তু তার জন্য পুলিশি অনুমতি মেলেনি। অনুমতি চাওয়া হলেও হাওড়া কমিশনারেট তা দেয়নি। বিজেপি সূত্রে খবর, রবিবারই রাজ্য নেতৃত্বকে অনুমোদন না দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে অনুমতি না পেলেও ঘোষিত কর্মসূচি যে হচ্ছেই, তা জানিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোমবার বলেন, ‘‘আমরা খুব একটা আশাও করিনি যে, অনুমতি পাওয়া যাবে। তৃণমূল সরকার আমাদের পথসভা করতেও বাধা দেয়! সেটা জেলা বা ব্লকেও। সেখানে নবান্ন অভিযানে বাধা দেবে এটা আর নতুন কথা কী? তবে যে কারণে আমরা এই কর্মসূচি নিয়েছি, তা গোটা রাজ্যের মানুষের দাবি। আমাদের কর্মীরা পুলিশের বাধা সত্ত্বেও অভিযানের জন্য তৈরি।’’সুকান্ত রাজ্য সভাপতি হওয়ার এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। এই এক বছরে এই প্রথম বড় মাপের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। তা সফল করতে তাই দল সর্বশক্তি দিয়ে পথে নামতে চাইছে মঙ্গলবার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষাও দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য দলের পক্ষে জেলা এবং ব্লক স্তরের নেতাদের কর্মী আনার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোন নেতা কত লোক আনতে পারলেন তারও একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে মঙ্গলবার। একইসঙ্গে পুজোর আবহে মেতে ওঠার আগে কর্মীদের চাঙ্গা করাও দলের লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, বিরোধী শিবির বরাবরই পুজোর আগে একটি বড় কর্মসূচি নেয় দলীয় ‘মেশিনারি’র শক্তি মেপে নিতে। অতীতে বামেরাও বিরোধী শক্তি হিসেবে লালবাজার অভিযান বা ওই ধরনের বড় জমায়েত করেছে। যেমন করতেন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উৎসবের আবহে দলের কর্মী-সমর্থকেরা সাধারণত আন্দোলন, বিক্ষোভ ইত্যাদি থেকে খানিক মুখ ফিরিয়ে নেন। উৎসবের অব্যবহিত আগে তাঁদের ‘চাঙ্গা’ করাটাই বিরোধী শিবিরের লক্ষ্য থাকে। যাতে পুজোর দিনগুলো বাদ দিয়ে আবার পথে নামার মতো উৎসাহ অবশিষ্ট থাকে। তার উপর এ বার সামনে রয়েছে পঞ্চায়েত ভোট। আগামী বছরের শুরুতেই ওই ভোট করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই জন্যও প্রধান বিরোধীদল হিসেবে বিজেপির প্রস্তুতি প্রয়োজন। এই ‘নবান্ন অভিযান’ তারই মহড়া বলে দলের একাংশের বক্তব্য।
বিজেপির পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার উত্তরবঙ্গ থেকে তিনটি ভাড়া করা ট্রেনে কর্মীরা রওনা দেবেন কলকাতার পথে। অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গের চারটি ট্রেন মঙ্গলবার সকালে রওনা দেবে। এ ছাড়াও লোকাল ট্রেনে এবং জেলা অনুযায়ী বাস ভাড়া করে কর্মীদের আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হাওড়া ময়দান থেকে সুকান্তের নেতৃত্বে মিছিল ছাড়াও সাঁতরাগাছি থেকে শুভেন্দু অধিকারী এবং কলেজ স্ট্রিট থেকে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে মিছিল যাবে নবান্নের দিকে। কোনও মিছিলই যে সহজে নবান্ন পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, সেটা জেনেই গেরুয়া শিবির প্রস্তুতি নিচ্ছে। একইসঙ্গে সুকান্ত জানিয়েছেন, পুলিশি বাধা দিলে দলীয় নেতৃত্ব ‘প্রয়োজন মতো’ পদক্ষেপ ঠিক করবেন। প্রসঙ্গত, সুকান্ত আগেই আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা কর্মীদের বলেছি, শান্ত ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে। সেখানে গোলমালের জায়গা একটাই— যদি পুলিশ অতি সক্রিয়তা দেখায়।’’ নবান্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা বজায় থাকায় সেখানে যে মিছিল নিয়ে যাওয়া যাবে না, সেটাও জানে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘আমাদের নবান্নের কাছাকাছি যেতে দিলে ভাল। কিন্তু যদি শুরুতেই আটকে দেয়, তা হলে আমরা প্রতিবাদ জানাব। শঠে শাঠ্যং হবে! শঠের সঙ্গে তো শঠতাই করতে হবে!’’
পুলিশের অনুমোদন যেমন মেলেনি, তেমনই বিজেপির মঙ্গলবারের কর্মসূচি ঘিরে যাতে গোলমালের পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে জন্য নবান্নও তৈরি। জানা গিয়েছে, নবান্ন ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। দায়িত্বে থাকবেন আইজিপি পদমর্যাদার একাধিক পুলিশকর্তা। নবান্নমুখী তিনটি মিছিল আটকাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থাও থাকছে। প্রয়োজনে যাতে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া যায়, তার ব্যবস্থাও থাকছে।
মঙ্গলবার বিজেপির অভিযানের সময়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা নবান্নে থাকবেন না। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তাঁর পূর্ব মেদিনীপুরে থাকার কথা। তবে গেরুয়া শিবিরের তরফে ইতিমধ্যেই বলা শুরু হয়েছে যে, বিজেপির অভিযানের কর্মসূচি শুনেই মুখ্যমন্ত্রী অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে আবহাওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছে বিজেপি। আবহাওয়ার পূর্বভাস অনুযায়ী মঙ্গলবার কলকাতা-সহ আশপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পুলিশের জলকামানের থেকেও আকাশের জলকামান কর্মসূচিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে। সেই কারণে নবান্ন অভিযানের জন্য বিজেপির তৈরি কলসেন্টার থেকে সোমবারও জেলায় জেলায় যোগাযোগ চলছে। বৃষ্টির ভয়ে যাতে লোক কম না হয়, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা সভাপতিদের। তবে সুকান্ত বলেন, ‘‘বৃষ্টি হোক আর যা-ই হোক, মানুষ যে ভাবে রাজ্য সরকারের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন, তাতে ভাল জমায়েত হবে। ভিজে ভিজেও নবান্ন অভিযানের জন্য তৈরি বিজেপি কর্মীরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy