Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

তোগাড়িয়াকে আনতে আদালতে দল, অনড় রাজ্যও

তাঁর বঙ্গ-আগমন নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। ফলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আগামী তিন দিন ধরে এই রাজ্যে তাঁর যে কর্মসূচি রয়েছে, তা নিয়ে। এই অবস্থায় প্রবীণ তোগাড়িয়ার সফর নিশ্চিত করতে ভিএইচপি বৃহস্পতিবার একাধিক পদক্ষেপ করেছে। এক দিকে, এই ধারা জারির বিরুদ্ধে জেলাশাসকদের কাছে দরবার করা শুরু হয়ে গিয়েছে।

প্রবীণ তোগাড়িয়া

প্রবীণ তোগাড়িয়া

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩২
Share: Save:

তাঁর বঙ্গ-আগমন নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। ফলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আগামী তিন দিন ধরে এই রাজ্যে তাঁর যে কর্মসূচি রয়েছে, তা নিয়ে। এই অবস্থায় প্রবীণ তোগাড়িয়ার সফর নিশ্চিত করতে ভিএইচপি বৃহস্পতিবার একাধিক পদক্ষেপ করেছে। এক দিকে, এই ধারা জারির বিরুদ্ধে জেলাশাসকদের কাছে দরবার করা শুরু হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে বিক্ষোভ আন্দোলনের পথেও নামানো হচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারের অন্য সদস্য সংগঠনগুলিকে। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্য নেতৃত্ব। এর পাশাপাশি মামলার পথেও হাঁটছে দল। উদ্দেশ্য, ১৪৪ ধারা জারির উপরে অন্তত স্থগিতাদেশ এনে সভার পথ নিষ্কণ্টক করা।

রাজ্য প্রশাসন অবশ্য নিজেদের অবস্থানে অনড়। পশ্চিমবঙ্গে পা রাখলে যে কোনও মূল্যে তোগাড়িয়াকে গ্রেফতার করতে বদ্ধপরিকর তারা। সে জন্য বিকল্প পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সরকারের এক শীর্ষকর্তা জানান, কিছু দিন আগে রামপুরহাট-লাগোয়া একটি গ্রামে ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তোগাড়িয়া। এই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পয়োরানা জারি করেছিল পুলিশ। ওই কর্তা জানান, তোগাড়িয়ার জন্য জারি ১৪৪ ধারা যদি কোনও আদালতে বাতিল হয়ে যায়, তা হলেও ওই গ্রেফতারি পরোয়ানার সাহায্যেই তাঁকে ধরা হবে।

১৪৪ ধারা কি আদালতে বাতিল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে? রায়গঞ্জের সভার অনুমতি অন্তত এ দিন আদালতের মাধ্যমে আদায় করে নিতে পেরেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ৫ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরের এই শহরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি সভা হওয়ার কথা। সেখানে তোগাড়িয়ারও হাজির থাকার কথা। সভাটিতে মাইক বাজানোর অনুমতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ওই অনুমতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা বিচারক উত্তম সাহু। ৭ এপ্রিল ফের মামলার শুনানি হতে পারে। পরিষদের দাবি, এর ফলে ৫ তারিখে সভা করার ব্যাপারে কোনও বাধা রইল না।

কিন্তু জেলা আদালতে প্রবীণ তোগাড়িয়ার প্রসঙ্গ ওঠেনি। ফলে, রায়গঞ্জে পরিষদের সভা হলেও সেখানে তোগারিয়া যোগ দিতে রাজ্যে এলে আইনভঙ্গের অভিযোগের মুখে পড়বেন বলে সরকার পক্ষের দাবি। কেন জেলা আদালতে এই নিয়ে আবেদন করা হল না? দিল্লি থেকে ভিএইচপি সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি জেলা আদালতে না তুলে সরাসরি হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। অক্ষয় সারঙ্গী নামে এক আইনজীবী এই নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছেন। আবেদনে তিনি বলেছেন, দেশের ভিতর দেশেরই কোনও নাগরিকের গতিবিধি ১৪৪ ধারা জারি করে আটকানো সংবিধান বিরোধী। দেশের যে কোনও জায়গায় সভা-সমাবেশের অধিকার রয়েছে যে কোনও নাগরিকের। সেটা তাঁর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রবীণ তোগাড়িয়ার গতিবিধির উপরে ১৪৪ ধারা জারি করায় তাঁর মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ওই আইনজীবীর দাবি, রাজ্য সরকারের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তি অবৈধ। বিজ্ঞপ্তিটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিও করা হয়েছে ওই আবেদনে।

কিন্তু আজ গুড ফ্রাইডে-র ছুটি হাইকোর্টে। কাল ও পরশু শনি ও রবিবার। ফলে ওই দু’দিনও উচ্চ আদালতে কাজ বন্ধ থাকবে। সে ক্ষেত্রে সোমবারের আগে এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের রেজিস্ট্রি অনুযায়ী যা খবর, তাতে মামলাটি ওঠার কথা প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে। এবং তা সোমবারের আগে না ওঠারই সম্ভাবনা।

এই অবস্থায় ভিএইচপি-র সামনে দ্বিতীয় পথ, প্রশাসনের কাছে দরবার করা। এ দিন জেলায় জেলায় ডিএম-দের কাছে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে বিক্ষোভ আন্দোলনের পথেও নামছে তারা। সঙ্গী বজরঙ্গ দল। ভিএইচপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, এই আন্দোলনের ঠেলায় যদি রাজ্য প্রশাসন পিছু হটে এবং ১৪৪ ধারা তুলে নেয়, তা হলেও কার্যসিদ্ধি হবে তাঁদের। এর পাশাপাশি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা জানাবেন, কী ভাবে তোগাড়িয়ার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এবং এই বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপও দাবি করা হবে।

এর কোনওটিই যদি সিদ্ধ না হয়, তবে? দিল্লি সূত্রে খবর, সে অবস্থায় ভিএইচপি-কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তোগাড়িয়া রাজ্যে এসে গ্রেফতার হবেন, নাকি সফর বাতিল করবেন? বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারা আপাতত অপেক্ষা করছে, শুক্রবার তাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক কিছু ঘটে কি না, সেটা দেখার জন্য। তবে শুক্রবার যে তোগাড়িয়া পশ্চিমবঙ্গে আসছেন না, সেটা এক রকম নিশ্চিত। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘তোগাড়িয়া শুক্রবার আসছেন না। শনিবার তাঁর আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ দিল্লি সূত্রেও কার্যত একই কথা জানানো হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE