৩০ মার্চ, রবিবার হতে চলেছে সেঞ্চুরি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
চলতি মাসের শেষ রবিবার, ৩০ এপ্রিল সেঞ্চুরি করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে দিন আইপিএলের দু’টি ম্যাচে মুখোমুখি হবে মুম্বই-রাজস্থান এবং চেন্নাই-পঞ্জাব। চারটি দলের কেউ ১০০ রান করুন বা না করুন, সে দিন প্রধানমন্ত্রীর সেঞ্চুরির উৎসব পালন করতে চলেছে বিজেপি।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই ৩ অক্টোবর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুরু করেন মোদী। কিছু দিন চলার পর প্রতি মাসের শেষ রবিবারকে এই অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী রবিবার সেই ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব প্রচারিত হবে।
এই অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে, এমন অনেক মানুষের কাজের উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শততম এপিসোডের প্রাক্কালে তাঁদের সকলকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। তার মধ্যে বাংলারও ১৭ জন রয়েছেন। বুধবার থেকে শনিবার তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন স্বয়ং মোদী। তার পর রবিবার সকালে রেডিয়োতে সম্প্রচারিত হবে শততম ‘মন কি বাত’।
বাংলার ১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার পটশিল্পী সেরামুদ্দিন চিত্রকর। ২০২০ সালে করোনাকালে সেরামুদ্দিনের গ্রামে পটুয়াদের মেলা বসেছিল। সেখানে রামায়ণের উপরে একটি পট বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসেন তিনি। দু’লক্ষ টাকায় রামায়ণের পট বিক্রির কথা মোদী বলেছিলেন তাঁর ‘মন কি বাত’-এ। ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন সেরামুদ্দিন। সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে আরও আনন্দ পাব, যদি প্রধানমন্ত্রীকে আমার পট দেখিয়ে গান শোনাতে পারি।’’
দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন শ্রীপতি টুডুও। তাঁর কৃতিত্ব অন্য। নিজে আদিবাসী হওয়ায় সংবিধানে তাঁদের সম্প্রদায় সম্পর্কে কী লেখা রয়েছে, তা জানার আগ্রহে চর্চা শুরু করেন। পরে অলচিকি লিপিতে সংবিধান অনুবাদ করে ফেলেছেন পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালি বিভাগের শিক্ষক। ২০২২ সালের মে মাসে ‘মন কি বাত’-এ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘দেশে অনেকেই নিজেদের ভাষা শক্তিশালী করার কাজ করছেন। এমনই এক জন মানুষ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার শ্রীপতি টুডু। তিনি সাঁওতাল সমাজের জন্য তাঁদের নিজস্ব লিপিতে সংবিধান অনুবাদ করেছেন। আমি তাঁর ভাবনা ও প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি।’’ ডাক পেয়ে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন শ্রীপতি। তবে প্রধানমন্ত্রীই শুধু নন, তাঁর ইচ্ছা যদি একবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রথম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও একবার দেখা করা যায়। বললেন, ‘‘চার দিনের অনুষ্ঠানে কী হবে এখনও সবটা জানি না। তবে কোনও ভাবে যদি রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করব।’’
দিল্লি যাওয়ার বিমানের টিকিট হাতে এসে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা সইদুল লস্করের। ২০১৮ সালে তাঁর কাজের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সময়মতো চিকিৎসা পরিষেবা না মেলায় বছর ১৩ আগে মৃত্যু হয়েছিল সইদুলের বোন মারুফা খাতুনের। বোনের স্মৃতিতে বারুইপুরের কাছে পুঁড়িতে তৈরি করছেন হাসপাতাল। নাম মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের জন্য জমি কিনতে তিনটি ট্যাক্সি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বাড়ি বানাতে স্ত্রীর সব গয়নাও বিক্রি করে দিতে হয়েছিল তাঁকে। পুঁড়িতে ৪০ কাঠা জমিতে ৩০ বেডের হাসপাতাল তৈরি হয়ে গিয়েছে। সইদুলের আশা, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কানে পৌঁছনোয় তিনি এই কাজে পাশে দাঁড়াবেন। তবে অন্য একটা আনন্দও রয়েছে। বললেন, ‘‘যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমাদের এখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এসেছিলেন। দেখতে গিয়েছিলাম। দূর থেকে দেখেছি। এ বার কাছ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখব।’’ মোদী তাঁর কাজ পছন্দ করেছেন। তিনিও কি প্রধানমন্ত্রীকে পছন্দ করেন? সইদুল বললেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। আর এত দূরে থেকেও তিনি আমার সম্পর্কে খোঁজ রাখেন দেখে খুব ভাল লাগছে।’’ সরকারি সম্মান পেলেও নিজের ট্যাক্সি আজীবন চালিয়ে যেতে চান সইদুল। তাঁর দাবি, এই ট্যাক্সি চালিয়েই হাসপাতাল, মানুষের ভালাবাসা পাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর ডাক পাওয়া। তাই তিনি আমৃত্যু ট্যাক্সি চালিয়ে যেতে চান।
মোদীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান নিয়ে চাপে রয়েছে রাজ্য বিজেপিও। বাংলা-সহ দেশের সব রাজভবনে আগামী রবিবার মোদীর কথা শোনার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতী মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। বিজেপি ঠিক করেছে, গোটা দেশে যত বেশি সম্ভব বুথে শততম ‘মন কি বাত’ সম্প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলায় দলের শক্তি তুলনায় কম থাকায় রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছেন সব বিধানসভা এলাকার কমপক্ষে ১০০টি বুথে হবে সম্প্রচার। সর্বত্র ১০০ জন মানুষের উপস্থিতির চেষ্টাও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঠিক হয়েছে কলকাতার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে ‘মন কি বাত’-এর সেঞ্চুরি উৎসব আকারে পালিত হবে। ঘটনাচক্রে, ১০০ নম্বর ওয়ার্ডটি নাকতলা এলাকা। যেখানে এখন কারাবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ২০০৫ সালের পুরভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy