গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র বিষয়কে শাসকের বিরুদ্ধে বিজেপি যে প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছে তা আগেই স্পষ্ট হয়েছে। বিজেপি তথা কেন্দ্রের সেই ভাবনারই প্রকাশ শুক্রবার আবারও শোনা গেল কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের বক্তব্যে। রাজ্য সফরে এসে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, তবু রাজ্যের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙেনি।’’
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে আগে জানা যায় গিয়েছিল, বাংলায় বালি, কয়লা, গরু পাচার সংক্রান্ত তদন্ত চললেও তদন্তকারীদের প্রধান ‘লক্ষ্য’ শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’কে সামনে রাখা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সেই তদন্তেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জানা গিয়েছিল, এমনটাই চান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কারণ, এই দুর্নীতির সঙ্গে বহু মানুষ যুক্ত। শুক্রবার ধর্মেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বড় বড় নেতা-মন্ত্রী জেলে, কতদিনে ন্যায় পাবেন চাকরিপ্রার্থীরা?’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, গত অগস্টেই মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নিতে বলে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক। ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘গত অগস্টেই মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নিতে বলে চিঠি পাঠিয়েছি, আজ পর্যন্ত উত্তর আসেনি।’’
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পরেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা সংক্রান্ত নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্তেই আপাতত বেশি সময় দেবে সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে গত অগস্টেই জানা গিয়েছিল, শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্তে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ, ওই ঘটনার ‘সামাজিক অভিঘাত’ অনেক বেশি।
প্রসঙ্গত, এখন এটা আরও বেশি করে স্পষ্ট যে, শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র তদন্তই এখন পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে জোরকদমে চলছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ ছাড়াও ওই তদন্তে গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ (ইডির দাবি অনুযায়ী) অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়া চার শিক্ষাকর্তা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই কাণ্ডের ‘মিডল ম্যান’ হিসাবে গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংহ।
প্রসঙ্গত, অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে আগেই ৫০ কোটিরও বেশি নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। পাশাপাশি, উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা। কিন্তু তার পরেও ইডি তাদের চার্জশিটে দাবি করে, পার্থ ও অর্পিতার নামে প্রচুর সম্পত্তি ইত্যাদি রয়েছে। অনেক ভুয়ো সংস্থার হদিস মিলিছে বলেও দাবি ইডির। এই ঘটনায় ‘অস্বস্তি’তে শুরু থেকেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কারণ, ওই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের ছবি প্রকাশিত হওয়ায় আমজনতার মধ্যে পার্থ তো বটেই, তাঁর এত দিনকার ধারক তৃণমূল সম্পর্কেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জোকার ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পার্থকে নিয়ে যাওয়া হলে এক মহিলা জুতো ছুড়ে মারেন। সেই ঘটনায় সাধারণের মধ্যে থাকা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। ফলে সব মিলিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সামাজিক এবং রাজনৈতিক অভিঘাত যে অনেক বেশি, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। তৃণমূলও পার্থকে মন্ত্রিসভা এবং দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এখনও গরু পাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের বিষয়ে তেমন কড়া অবস্থান নেয়নি দল। এতেই স্পষ্ট যে তৃণমূল অস্বস্তিতে। দলের ভিতরেও কখনও সাংসদ সৌগত রায়, কখনও সাংসদ জহর সরকার সেই অস্বস্তিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন।
এই পরিস্থিতি দেখে পুজোর আবহেও এই নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায় রাজ্য বিজেপি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও যে রাজ্য শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে চাপে রাখতে চাইছে তা স্পষ্ট করে দিলেন ধর্মেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েও যে জবাব মেলেনি তা তিনি প্রকাশ্যে এনে দিলেন শুক্রবার।
রাজ্য বিজেপিও যে এই ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ নিয়ে বেশি তৎপর, তা আগেই স্পষ্ট করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে দেখাও করেন। সেখানে যে মুখ্য আলোচ্য বিষয় ছিল শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’ তা জানিয়ে শাহ-সাক্ষাতের পরে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘হরিয়ানায় তিন হাজার, ত্রিপুরায় ১১ হাজার চাকরিতে দুর্নীতি হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৭৫ হাজার চাকরির মধ্যে ৫০-৫৫ হাজার বিক্রি করা হয়েছে! একা পার্থ, অপা-মপারা যুক্ত নন। প্রচুর কালেক্টর আছে। ব্লক অনুযায়ী কালেক্টর আছে। জেলা অনুযায়ী কালেক্টর আছে। ১০০ জনের নাম দিয়েছি। তার মধ্যে বিধায়ক, সাংসদ রয়েছেন। মন্ত্রীও রয়েছেন। চার বিধায়কের লেটারপ্যাড-সব বিভিন্ন তথ্য প্রমাণও জমা দিয়েছি। যাঁরা টাকা তুলেছেন। আমি চেয়েছি, আরও কড়া তদন্ত হোক। তদন্তকে একেবারে মূলে নিয়ে যেতে হবে।’’
শুভেন্দুর পরে শাহের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সাক্ষাতের পরে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমি ওঁকে বলেছি, এই সঙ্কট অত্যন্ত গভীর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy