Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali

প্রদীপের বাড়ির সামনে চাপ চাপ রক্ত, পড়ে রয়েছে বুলেটের খোল, হাটগাছিয়ায় জারি ১৪৪ ধারা

এ দিকে, সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে হাটগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আর না বিগড়োয় সে জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ।

নিহত বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

নিহত বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ১৪:২৯
Share: Save:

বাড়ির সামনেটাতে এখনও রক্তের দাগ স্পষ্ট। চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে এখানে-ওখানে। একটু এগোতেই চোখে পড়ল বুলেটের একটা খোলও পড়ে রয়েছে সেখানে। অভিযোগ, সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়ার এই মণ্ডল বাড়িতেই শনিবার হামলা চালিয়েছিল তৃণমূলের সশস্ত্র দুষ্কৃতীবাহিনী। বাড়ি থেকে টেনে বার করে নিয়ে যায় পরিবারের মেজ ছেলে প্রদীপকে। তাঁকে তাড়া করে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তাঁর পরিবারের অভিযোগ অন্তত তেমনটাই।

এ দিকে, সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে হাটগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আর না বিগড়োয় সে জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ।

রবিবার সকালে মণ্ডল বাড়িতে পৌঁছতেই দেখা গেল সেখানে জনা কয়েক লোক দাঁড়িয়ে। একটা আতঙ্ক ও শোক গ্রাস করেছে গোটা মণ্ডল পরিবারকে। বাড়ির দাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন পরিবারের ছোট ছেলে সন্দীপ মণ্ডল। পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক। আঙুল দিয়ে উঠোনটা দেখিয়ে তিনি বলে উঠলেন, “দেখুন, এখনও চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে ওখানে। পুলিশের সামনেই দাদাকে তাড়া করে গুলি করে মারল। অথচ পুলিশ কিছুই করল না!” এই বলেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে একটু থামলেন সন্দীপ। ফের বলতে শুরু করলেন, “দাদার একটা কাপড়ের দোকান ছিল। দুষ্কৃতীরা এসে দোকান ভাঙচুর করে। তার পর হামলা চালায় বাড়িতে। বোমা, গুলি ছোড়ে।” শনিবার ছিল জামাইষষ্ঠী। শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই পর্ব সেরে ওই দিনই বিকেলে সস্ত্রীক বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন প্রদীপ।

প্রদীপ ছাড়াও তাঁর জ্যাঠতুতো ভাই সুকান্ত মণ্ডলের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ঠিক একই কায়দায় তাড়া করে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারা হয় তরুণ এই বিজেপি কর্মীকে। সুকান্ত মাছ চাষ করতেন। পরিবার বলতে মা আর তিন বোন। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে দুই বোন আর মাকে নিয়েই থাকতেন সুকান্ত। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে শোকে স্তব্ধ মা। সুকান্তর জামাইবাবু দুধকুমার সরকার বলেন, “এত কম বয়সে এ ভাবে সুকান্তর মৃত্যু হবে ভাবতে পারিনি। ওঁর মা, বোন একা হয়ে গেল। ওঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে কি প্রশাসন? এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা হল না!”

আরও পড়ুন: ‘গন্ডগোলটা আর রাজনৈতিক নেই’ দাবি বিজেপির, সুপারি কিলার দিয়ে খুন, পাল্টা জ্যোতিপ্রিয়র

আরও পড়ুন: ‘ছেলের দেহটা খুঁজে দিন’, আর্তি বাবার, ধমকে পুলিশ বলল, ‘ভেড়ির কাদা জলে নামতে পারব না!’

দুই বাড়িরই অভিযোগ, শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধেই এ ভাবে খুন করা হয়েছে প্রদীপ ও সুকান্তকে। প্রদীপের ভাই সন্দীপের অভিযোগ, তৃণমূলের বৈঠকটা ছিল একটা বাহানা। বিজেপি যে হেতু ওই অঞ্চলে বেশি ভোট পেয়েছে, তাই হামলা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এই অঞ্চলে তৃণমূলের একাধিপত্য কায়েম ছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে থেকেই হাওয়াটা একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করে। তৃণমূলের অনেক সমর্থকই বিজেপিতে যোগ দেন। ফলে তা নিয়ে এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা ছিল। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের এই গড় থেকেই ১০০ ভোটের উপরে লিড নিয়ে বেরোয় বিজেপি। ফলে পরিস্থিতি ঘোরতর হতে শুরু করে সেখান থেকেই। শনিবার তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। রক্তাক্ত হয় হাটগাছিয়ার ভাঙ্গিপাড়া।

ঘটনার সূত্রপাত বিকেলের দিকে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, নলকোরা জুনিয়র স্কুলে তৃণমূলের মিটিং চলছিল। তা শেষ হতেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ধারালে অস্ত্র নিয়ে ভাঙ্গিপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। গ্রামবাসীদের দাবি, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ২০০-২৫০ জন ছিল। বোমা, গুলি ছুড়তে ছুড়তে গ্রামে ঢুকে বিজেপি কর্মীদের ঘর থেকে টেনে বার করে তাঁদের উপর হামলা চালায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy