অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সুকান্ত।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে চাইছে না পুলিশ, এমনই অভিযোগ নিয়ে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে গেলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির নবান্ন অভিযানে পুলিশের সংযমের প্রশংসা করে অভিষেক গুলি চালানো নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন। সুকান্তের অভিযোগ তা নিয়েই। যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এ সব আসলে বিতর্ক তৈরি করে প্রচারে থাকার চেষ্টা। কিন্তু রাজ্য বিজেপির ট্রেনি সভাপতি কি ভুলে গেলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে করা সায়ন্তন বসুর মন্তব্য? তিনি তো বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বলছি বুক লক্ষ্য করে গুলি চালান!’ কিংবা দিলীপ ঘোষের করা মন্তব্য— ‘উপর থেকে ছ’ইঞ্চি নামিয়ে দেব?’ তিনি কি ভুলে গেলেন অনুরাগ ঠাকুরদের বক্তব্য— ‘দেশ কি গদ্দারও কো, গোলি মারো শালো কো’? কিন্তু অভিষেক তো সাধারণ মানুষকে বলেননি। উনি দুষ্কৃতীদের কথা বলেছেন। যারা লাঠি-রড নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করেছে, তাদের খুন করতে যাচ্ছে, তাদের কথা বলেছেন। পুলিশ যে সংযম দেখিয়েছে তার প্রশংসা করে বলেছেন। সেটা না বুঝে ট্রেনি সভাপতি নাটক করতে যদি চান তো করুন।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালত সুকান্তের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল এবং অজিত মিশ্র জানিয়েছেন, জোড়াসাঁকো থানায় অভিষেকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশও এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি। তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার অনুমতি চেয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। সুকান্তের আইনজীবীরা জানান, তাঁরা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪ এবং ৫০৬-সহ একাধিক ধারায় এফআইআর করতে চান অভিষেকের বিরুদ্ধে।
অভিষেকের যে মন্তব্য নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতির অভিযোগ, তা তিনি করেছিলেন গত ১৪ সেপ্টেম্বর। এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে অভিষেক ওই মন্তব্য করেন। বিজেপির নবান্ন অভিযানের পর আহত পুলিশকর্তাকে দেখতে এসএসকেএমে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। বিজেপির অভিযানে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওঁরা অনেক সহ্যশক্তি দেখিয়েছেন, আমি থাকলে এখানে (কপালে হাত ঠেকিয়ে) গুলি করতাম।’’ সেই ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ওই মন্তব্য নিয়ে অভিযোগ জানাতে আদালতে গেলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত। আইনজীবী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে অভিষেকের ওই গুলি মন্তব্য নিয়ে মামলা করা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের তরফে সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে এঁটে উঠতে না পেরে বিজেপি এর আগেও কোর্ট কাছারি, ইডি, সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছে। এখনও তারা সেই চেষ্টাই করছে।’’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর অভিষেকের ওই মন্তব্যের পর ঘটনাটির একটি ভিডিয়োটি টুইটারে দিয়ে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন বিজেপির আর এক নেতা এবং রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সুকান্তের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, ‘‘রাজ্যের শাসকদলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে কর্মীদের উপর অত্যাচার করে পুলিশ। লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, বোম-সহ নানা ধরনের পদক্ষেপ করা হয়। এর ফলে অনেকে অসুস্থ হন। পরে আবার বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। এর পর অভিষেক ওই মন্তব্য করেন।’’ সুকান্তের আইনজীবীরা বলেন, এটি এক ধরনের অপরাধমূলক মন্তব্য। এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে নেওয়া হয়নি। তা হলে মানুষ কোথায় অভিযোগ জানাতে যাবেন?’’
যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এর আগেও অভিষেককে ইডির ভয় দেখাতে চেয়েছে বিজেপি। এখনও সেই রাজনীতিই চালিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ শান্তনু বলেন, ‘‘বিজেপির হাতে কিছু নেই। তাই তারা কখনও মৃত্যু কখনও মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করে। নবান্ন অভিযানের নামে কলকাতার রাস্তায় নেমে পুলিশকে মারধর করেছিল তারা। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছিল। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। সাঁতরাগাছিতে ইট-পাথর ছুড়েছিল পুলিশকে লক্ষ্য করে। তাতে অনেক পুলিশকর্মী আহতও হন। তার পরও পুলিশ বিজেপিকর্মীদের উপর কোনও রকম কড়া পদক্ষেপ করেনি। সহনশীলতা দেখিয়েছে। অভিষেক সে কথা বলতে গিয়েই একটি তুলনা টেনেছিলেন। বিজেপি সেই মন্তব্য বিকৃত করার চেষ্টা করে তা নিয়ে রাজনীতি করছে।’’
প্রসঙ্গত, অভিষেকের ‘গুলি মন্তব্যের’ সমালোচনা করে তখন বিজেপি বলেছিল, অভিষেকের এই মন্তব্য পুলিশকে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ করে তুলবে। এই ধরনের মন্তব্য করার আগে তাঁর দায়িত্ববোধ দেখানো উচিত ছিল। তবে ১৫ দিন পরে নতুন করে অভিষেকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের অনুমতি চেয়ে মামলা করতে গেলেন কেন, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy