প্রতীকী ছবি।
বিজয়ীর সঙ্গে সার্বিক ব্যবধান বিস্তর ঠিকই। কিন্তু বুথের বাক্স খুলে চোখ কপালে উঠছে বিজয়ীরও!
সবং বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের মতোই ১৫% ভোট বেড়েছে বিজেপি-র। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ওই কেন্দ্রে বিজেপি ৫ হাজার ৬১০ থেকে ৩৭ হাজার ৪৭৬ ভোটে পৌঁছে যাওয়ায় উৎসাহিত হয়েছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সবংয়ের মতো বিজেপি-র বরাবরের মরা গাঙে এমন বানের রহস্য খুব সহজ চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব! দলের অন্দরেই বরং আশঙ্কা, তৃণমূলের ঘরেই কি বাসা বেঁধেছে বিজেপি!
বুথওয়াড়ি হিসাবেই স্পষ্ট হচ্ছে বিজেপি-র উত্থানের ছবি। মূল সবংয়ের একের পর এক বুথে ২০১৪ সালের লোকসভা ও ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি ভোট পেয়েছিল, সেখানে এ বার তাদের ভোট বেড়েছে ৮ বা ১০ গুণ করে! বহু বুথেই বিজেপি দ্বিতীয়! তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘গুজরাতে পর্যন্ত তারা যখন ধাক্কা খাচ্ছে, সেখানে সবংয়ে তাদের ভোট ৩৭ হাজার হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর! বড় জোর হাজারদশেক হলে মানা যেতো।’’
আরও পড়ুন: দারুণ লড়াই, তৃতীয় হয়েও আনন্দ মোদীর
বুথ ধরে ধরে পরিসংখ্যান দেখলে সবং ১, ২, ৮ বা ৯ নং অঞ্চলে বিজেপি-র ভোট বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। এমনকী, মহাড়ের যে এলাকায় গত বছর বিধানসভা ভোটের দিন কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া ঢুকতেই পারেননি তৃণমূলের দাপটে, সেখানে বিদ্যাসুন্দরী প্রাথমিক স্কুলের একটি বুথে বিজেপি এ বার ‘লিড’ পেয়েছে! নিমকিমহা়ড়ের বুথ বা তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগ থাকা জলচকেও বিজেপি দ্বিতীয়। সবং-১ অঞ্চল তৃণমূলের প্রভাত মাইতি এবং নারায়ণ সাঁতরার এলাকা। সেখানে বিজেপি বুথপিছু গত বছরের ১৯, ৩৫, ১৫, বা ২৫ থেকে ১৭৩, ২৭৬, ১৭০, ২৪৫-এ উঠেছে। সবং-২ অ়ঞ্চলের নেতা শঙ্কর জানা। সেখানে নীলা তালদা প্রাথমিক স্কুলের বুথে বিজেপি-র ভোট ছিল ২০১৪-এ ৭, ২০১৬-এ ২৪ এবং এ বার ২৩৬। সবং-৮ অ়ঞ্চলের সারদাময়ী হাইস্কুল অমূল্য মাইতির নিজের বুথ। সেখানে বিজেপি-র ভোট আগের দু’বার ছিল ২০ ও ২৫। এ বার ১০৫। নিবারণ সামন্তের নিয়ন্ত্রণে সবং-৯ অঞ্চল। সেখানে খাগড়াবেড়িয়া, বলপাই প্রাথমিক ও হাইস্কুলের বুথেও বিজেপি ব্যবধান কমিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে। বেঁউচা প্রাথমিকের বুথে বিজেপি ৭ ভোট থেকে ১৩৭ হয়েছে। তেমাথানির লুটুনিয়া উত্তর বুথে বিজেপি প্রথম স্থানে! দলের এক ব্লক নেতার মন্তব্য, ‘‘পদ্মফুল চাষে কারা সার-জল দিল, দেখা দরকার।’’
তাঁর পুরনো দল থেকে ভোট বিজেপি-র দিকে টেনে আনার চেষ্টায় সবংয়ে নেমেছিলেন মুকুল রায়। আরও সেই কারণেই শাসক শিবিরের মধ্যে এখন সন্দেহের তির ঘুরছে একে অপরের দিকে। অমূল্যবাবু দাবি করছেন, তাঁদের দিকে অমূলক আঙুল তোলা হচ্ছে। ওই নেতার অনুগামীদের প্রশ্ন, তাঁরাই তো শুধু ভোটের দায়িত্বে ছিলেন না। মানসবাবুর সঙ্গে আসা নেতাদের ভূমিকা কি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে? মানসবাবু অবশ্য মুখ খোলেননি। সূত্রের খবর, তাঁর পর্যবেক্ষণ তিনি দলের উপর তলায় জানাবেন।
আর বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘সবংয়ে যে ভাবে আড়াই থেকে ১৮% হয়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে ২০২১-এ রাজ্যে কী হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy