প্রতীকী ছবি।
দু’পক্ষের অশান্তি চলছিল সেই লোকসভা ভোটের পর থেকে। রবিবার সকালে আরামবাগের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কালীপুরের একটি চায়ের দোকানে ঢুকে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হামলায় জখম হন আরও দুই বিজেপি কর্মী। ঘটনার জেরে তেতে ওঠে এলাকা। তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অবরোধ, এক তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ— কিছুই বাদ যায়নি। শেষে পুলিশ ও র্যাফ নিয়ে ওই এলাকায় যান আরামবাগের এসডিপিও নির্মলকুমার দাস। গ্রেফতার করা হয় দুই মহিলা-সহ চার জনকে। তারপরে উত্তেজনা প্রশমিত হলেও এলাকা থমথমে থারায় পুলিশ টহল চলতে থাকে। প্রতিবাদে, বুধবার আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে বিজেপি।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম আমির আলি খান (২৩) ওরফে লকাই। তাঁর বাড়ি কালীপুরের পশ্চিম হরিপুরে। তাঁকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে শেখ আব্বাস আলি, ইয়াকুব আলি, টগরী বিবি ও ছবি বিবি নামে চারজনকে। ধৃতেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। এসডিপিও বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ১১ জন। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি
চালানো হচ্ছে।”
দোষীদের চরম শাস্তি দাবি করে নিহতের মা আঙ্গুরা বিবি বলেন, ‘‘চাইছিলাম না ছেলে রাজনীতি করুক। ও শোনেনি। বিজেপি করার জন্য তৃণমূলের ছেলেরা ওকে বারবার ঘরে-বাইরে শাসিয়েছে। ওর ছোট চায়ের দোকানেও হামলা চালিয়েছে। আজ মেরেই ফেলল।’’ নিহতের বাবা জাফর আলি খান বলেন, ‘‘তৃণমূল ছাড়া অন্য দলকে পছন্দ করার অধিকার নেই? ওয়ার্ডের চেনা ওয়ার্ডের ছেলেদের হাতেই ছেলে খুন হবে ভাবিনি।” বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের খুনের রাজনীতি বরদাস্ত করব না। বুধবার, বন্ধের দিন থেকেই ওদের নোংরা রাজনীতির প্রতিবাদে আন্দোলন চলবে।”
পক্ষান্তরে, অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের দাবি, “পাড়াগত ঝামেলায় এই খুনে বিজেপি অন্যায় ভাবে রাজনীতির রং লাগিয়ে বিশৃঙ্খলা করছে। প্রশাসন বিষয়টা দেখছে। রাজনৈতিক ভাবে আমরা বিজেপির এই গুন্ডাগিরির মোকাবিলা করব।” এ দিন রাতেই আরামবাগে যান দিলীপবাবু।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় ১২ নন্বর ওয়ার্ডের কালীপুর মোড়ে দু’পক্ষের দুই কর্মীর মধ্যে বিবাদ থেকে মারপিট হয়। দু’পক্ষই রাতে থানায় অভিযোগ জানায়। তারপরেও রাতে দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয়ে হুমকি এবং হামলার অভিযোগ ওঠে। রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ কালীপুর মোড়ে দলের কয়েকজনের সঙ্গে চা খেতে গিয়েছিলেন বিজেপি কর্মী লকাই। অভিযোগ, তৃণমূলের ছেলেরা অতর্কিতে লাঠি, রড, বাঁশ, মুগুর এবং তরোয়াল নিয়ে সেখানে চড়াও হয়। মাথায় গুরুতর চোট পেয়ে জ্ঞান হারান লকাই। আহত হন তারিকুল ইসলাম এবং শেখ রিজাউল নামে আরও দুই বিজেপি কর্মী। আহতদের মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে লকাইকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তারিকল। রিজাউলের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। পরে অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে জখম তৃণমূল কর্মী শেখ আব্বাস আলি এবং শেখ পিন্টুকে হাসপতালে আনা হয়। শেখ পিন্টুর প্রাথমিক চিকিৎসা হয় এবং আব্বাসকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলে পুলিশ লকাই খুনের ঘটনায় আব্বাসকে গ্রেফতার করে।
লকাইয়ের মৃত্যুর খবর আরামবাগে পৌঁছতেই তেতে ওঠে ১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং সংলগ্ন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। দুই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল কর্মীরা বাড়ি ছেড়ে পালান। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দমকল গিয়ে আগুন নেভায়। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ বারিকের নেতৃত্বে খুনের অভিযোগ তুলে গ্রেফতারের দাবিতে তাঁর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। কালীপুর মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে দুপুর আড়াইটে থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ হয়। মাঝে পুলিশ অবরোধ তোলার চেষ্টা করে। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ হয়। কৃষ্ণবাবু অভিযোগ মানেননি। বিজেপি নেতা বিমানবাবুর অভিযোগ, “পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান রাজেশ চৌধুরী সম্প্রতি তৃণমূলে সক্রিয় হয়ে এই খুনের রাজনীতি শুরু করেছেন।’’ রাজেশবাবু অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘খুনের রাজনীতি আমি বিশ্বাস করি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy