ভোটের ফল থেকে দলের সদস্য-সংখ্যার নিরিখে রাজ্যে বিজেপির অন্যতম ‘শক্ত ঘাঁটি’ মতুয়া মাটি। অথচ অন্য আরও ১৬টি সাংগঠনিক জেলার মতো এই এলাকারই নদিয়া দক্ষিণ (রানাঘাট) ও বনগাঁতেও জেলা সভাপতিদের নাম এখনও ঘোষণা করেনি বিজেপি। এই নিয়ে এক দিকে এলাকায় দলের নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধিদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে যেমন ‘হতাশা’ প্রকাশ করছেন, তেমনই এর নেপথ্য কারণ ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব’ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
গত লোকসভা ভোটে এই দুই সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত বনগাঁ ও রানাঘাটে জিতেছিল বিজেপি। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের জয়ের ব্যবধান রাজ্যে দলের সাংসদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের ১৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে গত বিধানসভায় ১২টি আসনই জিতেছে বিজেপি। পরে উপনির্বাচনে শান্তিপুর, রানাঘাট দক্ষিণ ও বাগদা জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এ ছাড়া, দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানেও রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক নদিয়া দক্ষিণে দু’লক্ষ ৪৬ হাজার জন সদস্য হয়েছেন। বনগাঁয় সংখ্যাটা প্রায় পৌনে দু’লক্ষ।
এমন ‘শক্তিশালী’ দুই জেলায় সভাপতির নাম না-ঘোষণা হওয়াতেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। দলীয় সূত্রে ব্যাখ্যা, ব্যারাকপুর, যাদবপুরের মতো বনগাঁতেও ৫০% মণ্ডল তৈরি না-হওয়ায় সভাপতি নির্বাচন স্থগিত। যদিও বনগাঁর দলীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি, এই ব্যাখ্যা আদতে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’কে আড়াল করারই চেষ্টা হতে পারে! সূত্রের দাবি, পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, সেই প্রশ্নে এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের পাল্লা বর্তমান সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের দিকেই হেলে রয়েছে। যদিও দেবদাসের বক্তব্য, “বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব দেখছেন। মন্তব্য করব না।” সূত্রের দাবি, রাজ্যের কাছে তিন-চারটি নতুন নাম সভাপতি পদের জন্য জমা দিয়েছেন বিধায়কদের একাংশ। ঐকমত্য না-হওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার বলেন, “পুরনো সভাপতি, না কি নতুন কেউ সভাপতি হবেন, সেটা নিয়ে বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একমত হতে পারেননি। তাই নামও ঘোষণা হয়নি।”
নদিয়া দক্ষিণের এখন সভাপতি রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক, বছর ৭০-এর পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, বিধায়ক ও ষাটোর্ধ্বদের যথাসম্ভব সভাপতি রাখা হবে না, এই ‘মাপকাঠি’তে পার্থসারথি আর সভাপতি না-ও থাকতে পারেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের যেখানে আর মাত্র এক বছর বাকি, সেখানে পরবর্তী সভাপতির নাম ঘোষণায় ‘দেরি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলেই। এলাকার এক বিধায়কের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “আমরা হতাশ।” অন্য এক বিধায়কও বলছেন, “বিধানসভা ভোটের আর এক বছর বাকি। কম সময়ে সব গুছিয়ে লড়াই সম্ভব তো? আমরা কি আদৌ জিততে চাইছি!” বিতর্কের মধ্যে ঢুকবেন না জানিয়ে সাংসদ জগন্নাথ বলছেন, “সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চলছে। নিশ্চয়ই কোথাও আটকে আছে। যাঁরা দায়িত্বে, তাঁরাই বলতে পারবেন। আমি জনসাধারণের প্রতিনিধি। সংগঠনের কেউ নই।” পাশাপাশি, রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক অসীম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, দলীয় পদ্ধতি মেনেই সবটা হবে। রামনবমীর প্রস্তুতি-সহ যাবতীয় কর্মসূচিও চলছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)