— ফাইল ছবি।
রাজ্য বিধানসভায় সোমবার ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ নিয়ে বিতর্কের সময় পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে গণভোট চেয়েছেন কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ শর্মা। অথচ এই প্রস্তাব নিয়েই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অবস্থান একেবারেই বিপরীত। সোমবার শুভেন্দু জানালেন, তাঁরা বাংলা ভাগের পক্ষে নন। তবে উত্তরবঙ্গের অনুন্নয়ন নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। একটি বিষয় নিয়ে একই দলের দুই বিধায়কের ভিন্ন মতের বিষয়টিকে তৃণমূল অবশ্য ‘পলিটিক্যাল গেম’ হিসাবেই দেখছে। তাদের খোঁচা, ‘এ সব আসলে নিম্নমানের রাজনীতি’।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব প্রসঙ্গে সোমবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা বাংলা ভাগের পক্ষে নই। এক পশ্চিমবঙ্গ, শ্রেষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত। কিন্তু উত্তরবঙ্গের অনুন্নয়ন নিয়ে সমস্যা নিরসন করতে হবে।’’ এর পরেই শুভেন্দু গত তিনটি আর্থিক বছরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন, সুন্দরবন উন্নয়ন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন নিয়ে রাজ্যে কত খরচ হয়েছে, তার খতিয়ান দিয়েছেন। তাঁর পেশ করা নথিতে দেখা গিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য বাজেটে যত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার ৬৭.৭ শতাংশ খরচ হয়েছে। ২০২০-২১ সালে বরাদ্দের ৩৪.৭ শতাংশ খরচ হয়েছে। ২০২১-২২ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের ২২.৪ শতাংশ খরচ হয়েছে। এই খতিয়ান দেখিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এ সব অনুন্নত জায়গা অনুন্নতই রয়েছে।’’
বিজেপির সাংসদ, বিধায়কেরা বিভিন্ন সময় বাংলাভাগের দাবি তুলেছেন। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ থেকে নিশীথ প্রামাণিকেরা। সোমবার ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ সংক্রান্ত বিতর্কে অংশ নিয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ গণভোটের দাবি তোলেন। তার মধ্যেই শুভেন্দুর গলায় ভিন্ন সুর। শাসকদল তৃণমূল অবশ্য গোটা বিষয়টিকে এক করেই দেখছে। তাদের অভিযোগ, এ সবই আসলে বিজেপির রাজনৈতিক খেলা। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি দ্বিধাবিভক্ত। এক অংশ বাংলার বিভাজন চায়নি। আবার অন্য অংশ বাংলা বিভাগের কথা বলেছে। ভিতরেও বলেছে, বাইরেও বলেছে। এটা ওঁদের রাজনৈতিক গেম।’’ কেন শোভনদেব এ রকম ভাবছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ যদি না হত, তা হলে যাঁরা বিভাজনের কথা বলছে, তাঁদের চুপ করিয়ে দিত ওঁদের দল। বা বহিষ্কার করত। এটা পলিটিক্যাল গেম। এটা রাজনৈতিক ভণ্ডামি। এক দল বাংলা ভাগ নিয়ে কথা বলছে। দল তাঁকে বহিষ্কার করছে না। এটা পলিটিক্যাল হিপোক্রিসি। একই সঙ্গে এটা গেম।’’
শোভনদেব এ-ও মনে করেন যে, এই রাজনৈতিক খেলার মাধ্যমেই বিজেপি দু’বার ভোটে জিতেছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিচ্ছিন্নতা যাঁরা চাইছেন, তাঁদের সমর্থনে দু’বার সাংসদও হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। স্বাভাবিক ভাবেই এটা দিল্লির রাজনীতির দিক। এখানে উন্নয়ন হচ্ছে, ভণ্ডুল করে দাও। উন্নয়ন বন্ধ হবে। রাজনৈতিক ভাবে আমরা লাভবান হব। এটা দেশপ্রেম বিরোধী। যে দেশে জন্মেছি, যে রাজ্যে জন্মেছি, তার স্বার্থবিরোধী কাজ।’’
বাংলার ভাগ চেয়েই যে উত্তরবঙ্গে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি, তা সোমবার এক প্রকার মেনেই নিয়েছেন দলের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ। ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ সংক্রান্ত বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর জন্য মানুষ আমাকে সমর্থন করেছেন। পাহাড়ের মানুষ কী চাইছেন, কেন চাইছেন, তা জানার জন্য গণভোটের আয়োজন করা হোক। কেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাহায্য নিয়ে রাজ্য সরকার মানুষের মত জানার চেষ্টা করুক।’’
তাঁর এই দাবির বিরোধিতা করেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা যখনই ভাগীরথী নদীর ও পারে যান, তখন বাংলা ভেঙে পৃথক রাজ্যের দাবি সমর্থন করেন। আবার দক্ষিণবঙ্গে এলেই অখণ্ড বাংলার কথা বলেন। এটাই ওঁদের দ্বিচারিতার রাজনীতি।’’
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিধানসভায় ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ পাশ হয়েছে। ২০১৭ সালে ষষ্ঠদশ বিধানসভায়। তখন কংগ্রেস ছিল প্রধান বিরোধী দল। সেই সময় ওই প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল। তখন বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ছিল মাত্র তিন। আর এখন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। সেই বিজেপিরই বড় অংশ যখন বঙ্গভঙ্গের হয়ে সরব, তখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতার গলায় ভিন্ন সুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy